বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের বাসায় চুরির ঘটনায় জড়িত আল-আমিন দেওয়ান ওরফে আযানকে (২৯) দিনাজপুর থেকে আটক করেছে র‌্যাব। এ সময় চুরি যাওয়া আইফোনসহ অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

র‍্যাব জানায়, আল আমিন নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা পরিচয়ে এক নারী ক্রিকেটার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের ১৭ দিনের মাথায় বিয়ে করে।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর তেজকুনিপাড়া খেলাঘর মাঠে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তার ও সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলনকালে তার ব্যবহৃত দুটি আইফোন চুরি হয়। একইদিনে তার বাসা থেকে সাড়ে ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ব্যাংকের চেক বই ও ভিসা কার্ডসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় স্বর্ণা আক্তার রাজধানীর শেরে-বাংলা নগর থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়। চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে র‌্যাব-১৩ ও র‌্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল দিনাজপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং একমাত্র আসামি আল-আমিন দেওয়ান ওরফে আযানকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় ৪টি আইফোনসহ ৫টি মোবাইল ফোন, প্রাইম ব্যাংকের একটি চেক বইয়ের পাতা, প্রাইম ব্যাংকের একটি মাস্টার কার্ড, বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রা, ৩টি হাত ঘড়ি, ৪টি চেইন, একটি নোজপিন, একটি ব্রেসলেট, দুটি আংটি ও একটি হ্যান্ড ব্যাগ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল-আমিন চুরির ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, প্রতারণার টার্গেট নিয়ে আল আমিন নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার পরিচয় ও বর্তমানে ছুটিতে অবস্থান করে কাপড়ের ব্যবসা করছে বলে অন্য এক নারী ক্রিকেটার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হয়। পরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে। একপর্যায়ে পরিচয়ের ১৭ দিনের মাথায় গত ১২ জানুয়ারি আল আমিন ওই নারী ক্রিকেটারকে বিয়ে করেন।

তিনি বলেন, স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে ওই নারী ক্রিকেটারসহ ৪ জন গত তিন বছর ধরে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন। বিয়ের সূত্র ধরে আল আমিনও কৌশলে স্বর্ণাদের ফ্ল্যাটে স্ত্রীর সঙ্গে আলাদা একটি রুমে বসবাস করতে থাকে। এসময় তিনি তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ব্যবসায়িকসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কৌশলে বিভিন্ন সময় পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্বর্ণা ও তার ৩ জন রুমমেটসহ সতীর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে রাজধানীর তেজকুনিপাড়া খেলাঘর মাঠে অনুশীলনে যান। এসময় আল-আমিন বাসায় অবস্থান করছিল। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বর্ণার রুমের ওয়ারড্রবের তালা ভেঙে ডলার, ১টি চেক বই, ভিসা কার্ড, তার রুমমেট অন্য নারী ক্রিকেটারের ব্যাগ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ও তাদের ব্যবহৃত ব্যাগ করে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে তেজকুনিপাড়া খেলাঘর মাঠে আসে। এসময় তাদের অনুশীলনের ভিডিও করার কথা বলে অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের ব্যবহৃত আইফোন দুটি ব্যাগ থেকে নিয়ে কিছুক্ষণ ছবি তুলে কৌশলে মাঠ থেকে পালিয়ে যায়।

পরে আল আমিন স্বর্ণা আক্তারের ব্যবহৃত একটি আইফোন রাজধানীর পুরাতন মালামাল বিক্রির মার্কেটে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পরে বাসে করে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে প্রথমে রংপুর গিয়ে রাতে হোটেলে থাকে এবং পরদিন দিনাজপুর গিয়ে আরেকটি হোটেলে ওঠেন।

র‍্যাবের মুখপাত্র আরও বলেন, আল-আমিন ২০১১ সালে রাজধানীর একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছে বলে জানায়। তিনি ইতোপূর্বে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে কাপড়ের দোকানে চাকরি করতো। পরে ২০১৬/২০১৭ সাল থেকে নারীদের সঙ্গে প্রতারণাসহ অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করা ও বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করতে থাকে। প্রতারণার পর পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপনে চলে যেতো। তিনি ২০২২ সালে প্রথম বিয়ে করেন। এর আগে বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে তার প্রতারণা করার বিষয়ে প্রথম স্ত্রী জানতে পারলে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। আল-আমিনের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন থানায় ৪টির বেশি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় তিনবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন তিনি।

এমএসি/এসএম