দেশে এমন কোনো কসমেটিকস নেই যা নকল হয় না : ভোক্তা মহাপরিচালক
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশের এমন কোনো কসমেটিকস পণ নেই যা নকল হয় না। মোড়কজাত এসব পণ্য যখন বাংলাদেশে আসে, তখন অনেকগুলো ধাপ পার করতে হয়। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে পণ্যতে আমদানিকারকের তথ্য থাকতে হবে৷ কিন্তু আপনারা দেখবেন বেশিরভাগ পণ্যতে আমদানির তথ্য থাকে না। এতে প্রমাণিত হয় এ কসমেটিকসগুলো আমদানির প্রোপার চ্যানেলে আসছে না। এগুলো অবৈধ পণ্য।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা সই অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, অবৈভাবে কসমেটিকস আনায় এসব পণ্যের কাস্টম তার শুল্ক পাচ্ছে না। এছাড়া এসব পণ্যতে কী কী উপাদান আছে সেগুলো এবং উৎপাদনকারী দেশের নামও থাকে না।
তিনি বলেন, কেরাণীগঞ্জে যেভাবে ভুয়া পণ্য তৈরি হচ্ছে তা বিরল৷ খোলা ড্রামে রং গুলিয়ে সেখানে তৈরি হচ্ছে সাবান-শ্যাম্পুসহ নানা ধরনের প্রসাধনী। এটা বন্ধ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এগুলো একটা ভয়াবহ অবস্থায় রূপ নিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে যদি ভুয়া পণ্যতে সয়লাব হয়, তাহলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে৷ ভুয়া পণ্য ব্যবহার করে অনেকের ত্বক পুড়ে যাচ্ছে৷ এ চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে আমরা আশা করছি যে, ভুয়া পণ্য কিছুটা কমবে এবং উন্নত প্রযুক্তিতে বাংলাদেশেই তৈরি হবে বিশ্বমানের পণ্য। ফলে বাংলাদেশের আমদানি নির্ভরতা কমবে। এছাড়া আমাদের কিছু বেকার সমস্যার সমাধান হবে৷ অদূর ভবিষ্যৎতে বাংলাদেশ এসব পণ্য রপ্তানির সুযোগ আসবে। ত্বকের ক্যান্সারসহ নানামুখী সমস্যা থেকেও মুক্তি মিলবে। আমাদের কিছু পণ্য ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডে রপ্তানিও হচ্ছে।
রিমার্ক-হারল্যানের পরিচালক চিত্রনায়ক শাকিব খান বলেন, আপনারা জানেন নকল ও ভেজাল কসমেটিকসে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। নকল ও ভেজাল কসমেটিকস ব্যবহার করে মানুষ স্কিন ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নকল ও ভেজাল কসমেটিকস পণ্য বিক্রি করে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এটি ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। আমরা মনে করি, পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয়, সেক্ষেত্রে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিতে চাই।
তিনি বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আমরা এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে চাই, যা ক্রেতাদের নকল ও ভেজাল কসমেটিকস পণ্য ব্যবহার থেকে রক্ষা করবে। আমরা চাই মানসম্মত পণ্য ব্যবহার করে ক্রেতারা সন্তুষ্ট থাকবেন। এক্ষেত্রে আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে। ভোক্তাদের অথেন্টিক কসমেটিকস পণ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। যাতে তারা ভালোমানের পণ্য জেনে-শুনে কিনতে পারেন।
অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, বাংলাদেশে কসমেটিক্স খাত এখনো আমদানি ও লাগেজ নির্ভর। পাশাপাশি নকল পণ্যে বাজার সয়লাব হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে দেশে ঢুকছে মানহীন পণ্য। এতে করে ক্রেতারা প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। ফলে নানাবিধ রোগ-বালাই দেখা দিচ্ছে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টির জন্য ভেজাল ও মানহীন কসমেটিকস পণ্য দায়ী হলেও তার যথাযথ তদারকি না থাকায় ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, বিদেশি কসমেটিকস ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যে বাংলাদেশে তাদের পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে। যা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক। বিদেশিদের পাশাপাশি দেশে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে মানহীন পণ্যে ভোক্তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রায় সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর এই খাতের বাজার মূল্য প্রায় ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, বর্তমানে কতিপয় মানহীন ও ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ির খবর প্রায়শই দেখা যায়। এসব ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। পড়ে যাচ্ছেন বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তাই স্থানীয় উৎপাদনকে নীতি সহায়তা দিয়ে মানসম্মত পণ্য ক্রেতাদের জন্য সুলভ করা জরুরি।
এমএম/কেএ