দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে টিআইয়ের প্রতিবেদন ধোঁয়াশাপূর্ণ
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দুর্নীতি ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রণয়নে কী কী প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে সেগুলো সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। অর্থাৎ প্রতিবেদনের প্রক্রিয়াগুলো ধোঁয়াশাপূর্ণ। তাই ধারণাসূচকের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে মন্তব্য করার কোনো অবকাশ নেই।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন টিআইয়ের রিপোর্ট সম্পর্কে এক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
দুদক সচিব বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের সিপিআই নির্ধারণের জন্য মোট আটটি জরিপ নির্ধারিত হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশন ট্রান্সফরমেশন ইনচেন্স, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কান্ট্রি রেটিংস, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট বুল অব ল ইনডেক্স, ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসি প্রজেক্ট ও বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, টিআইয়ের দুর্নীতি ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলোর আলোকে আটটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সম্পাদিত জরিপের ভিত্তিতে বাংলাদেশের দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রণয়ন করা হয়েছে। সেখানে দুদকের কাছে কোনো তথ্য চায়নি। তারা কোন কোন বিষয়ের ওপরে কী কী প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে, সেগুলো সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। সুতরাং সেই প্রেক্ষাপটে টিআইয়ের ধারণাসূচকের বিষয়ে দুদকের পক্ষে মন্তব্য করার কোনো অবকাশ নেই।
তিনি আরও বলেন, টিআই নীতিমালা অনুযায়ী, দুর্নীতি ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রণয়ন করা হয় কয়েকটি জরিপের ওপর ভিত্তি করে। এই জরিপগুলোতে মূলত ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকদের ধারণার প্রতিফলন ঘটে থাকে। রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গ হলো নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগ (জাতীয় সংসদ)। এদের অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ বিষয়ে সরকার মন্তব্য করতে পারে। কোনো দপ্তরে দুর্নীতি হলে এবং তা দুদকের গোচরীভূত হলে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া, দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক দুদকের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআই সিপিআই প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। যা বাংলাদেশের স্কোর ২৫ থেকে ১ পয়েন্ট কমে ২৪ হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে দুই ধাপ অবনমন হয়েছে বাংলাদেশের। ২০২৩ সালে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। সেই সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৫।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সূচকের বিশ্লেষণ করলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান গত এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন। স্কোর ও অবস্থানের এই অবনমন প্রমাণ করে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গীকার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণা বাস্তবিক অর্থে কার্যকর প্রয়োগ হয়নি। বরং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের আরও অবনতি হয়েছে।
আরএম/কেএ