করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৪ এপ্রিল থেকে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে আরোপিত রয়েছে বেশকিছু বিধিনিষেধ; যা লকডাউন নামেও মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। ১৪ এপ্রিল বিধিনিষেধের শুরু থেকে সপ্তম দিনের পর্যন্ত পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায় রাস্তায় প্রতিদিনই গাড়ি ও মানুষের সংখ্যা একটু একটু করে বেড়েছে।   

তবে সংক্রমণ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না কমায় এরইমধ্যে বিধিনিষেধ আরও ৭ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই সংক্রমণ না কমার পর্যায়ে আছে দেশ। সময়ের ব্যবধানে কমেছে প্রশাসন-পুলিশের তৎপরতা। ঢিলেঢালা চেকপোস্টে বদলে গেছে সড়কের চিত্রও। আগের দিনগুলোর চেয়ে মানুষ ও যানবাহন দেখা যাচ্ছে বেশি। 

মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক ঘুরে দেখা গেল, অবাধে চলাফেরা করছে সাধারণ মানুষ। কোথাও কোনো ব্যারিকেড নেই। অফিসে যারা যাচ্ছেন তাদেরও বেশিরভাগকেই পড়তে হয়নি জেরার মুখে।   

গত ছয়দিনের তুলনায় সড়কে মোটরসাইকেল, গাড়ি, পিকআপ, ট্রাক, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশার সংখ্যাও বেশি দেখা গেছে। পুলিশের দাবি, শুরুতে যেমন চেকিং হতো, সাত দিনের মাথায় নানা কারণে সেটি অনেকটাই চলছে ঢিমেতালে। সড়কে তাদের আগের মতো তৎপরতা নেই। তাই যে যেভাবে পারছেন বের হচ্ছেন। কোনো বিধিনিষেধ নেই।

মূল সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম হলেও বেশিরভাগ অলিতেগলিতে দেখা যাচ্ছে মানুষের উপড়েপড়া ভিড়। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই, যে যার মতো বের হচ্ছে। কোথাও কোথাও চলছে আড্ডাবাজি। এ অবস্থায় চলমান কঠোর বিধিনিষেধ কতটা কার্যকর হবে তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সকালে রাজধানীর জাহাঙ্গীরগেট, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, সোবহানবাগ, ধানমন্ডির একাংশ, সংসদ ভবন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেই পথে পথে ছিল যানবাহন ও মানুষের ভিড়। কয়েকটি পয়েন্টে মানুষকে  পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হলেও ছিল না তেমন জিজ্ঞাসাবাদ। 

কারওয়ান বাজারে কাচঁবাজার করছিলেন শাহজাহান নামে এক ব্যক্তি। তিনি বললেন, মেসে লোক খাওয়াই। লকডাউনের কারণে ছয়দিন বাসার আশপাশ থেকে বাজার করেছি। কিন্তু মহল্লায় সবজি দাম প্রায় দ্বিগুণ। এজন্য আজ এখানে এসেছি।  পুলিশ কোথাও আটকে ছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি না সূচক জবাব দেন।

প্রাইম ব্যাংকের কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম জানালেন অন্যদিন তাকে কয়েক জায়গায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হলেও আজ অনেকটা ঢিলেঢালা।

ধানমন্ডির ভূতের গলিতে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা। ভ্যানে করে বাজার বসিয়েছেন দোকানিরা। তাদের অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক।

এলাকার ফুটপাথে বসে অনেক তরুণকে আড্ডা দিতেও দেখা গেছে। তাদের কাছে মাস্ক থাকলেও সঠিক নিয়মে ছিল না। দেখা গেছে কারও মাস্ক পকেটে, কারও থুতনিতে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্মগেটে দায়িত্বরত একজন সার্জেন্ট বলেন, চেকপোস্ট আগের মতো আছে। তবে মানুষের চলাচল বেড়েছে। যাকে সন্দেহ হচ্ছে তাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। পরিচয় ও তার বের হওয়ার কারণ নিশ্চিত হওয়ার পর ছাড়ছি। যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে জরিমানা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার দুজন সদস্য জানান, এলিফ্যান্ট রোডে চেকিং নিয়ে একজন চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যের মধ্যে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার মতো ঘটনা এড়াতে আজ কিছুটা শিথিলতা আছে। 

এনএম/এনএফ