নাইজেরিয়ান নাগরিক ডন ফ্রাঙ্কি ওরফে জ্যাকব ফ্রাঙ্কি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানন্দর ইমিগ্রেশন থেকে মালাওয়ের নাগরিককে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২৫ জানুয়ারি রাতে ২০০ গ্রাম কোকেনসহ তানজানিয়ার অপর এক নাগরিককে গ্রেপ্তার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। 

মাত্র একদিনে একাধিক অভিযানে দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক সলিড কোকেন উদ্ধারের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে মাঠে নামে ডিএনসি। এরপর ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ধারাবাহিক অভিযানে দুই বাংলাদেশিসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে দেশে গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের তথ্য।

গ্রেপ্তার অপর চারজন হলেন- সাইফুল ইসলাম রনি (৩৪), মো. আসাদুজ্জামান আপেল (২৭), ক্যামেরুনের নাগরিক কেলভিন ইয়েং, নাইজেরিয়ার নাগরিক ননসো ইজিমা পেটার ওরফে অস্কার (৩০) ও নুডেল ইবুকা স্টানলি ওরফে পডস্কি (৩১)।\

রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ডিএনসির উত্তরা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী।

মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, মালাওয়ের নাগরিক ও তানজানিয়ার নাগরিককে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ, ডিজিটাল ডিভাইস ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কোকেন চোরাচালান চক্রের অন্যান্য সদস্যসহ ডন ফ্রাঙ্কি নামের এক নাইজেরিয়ান নাগরিকের সন্ধান পাওয়া যায়। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তিনি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি চক্রের সদস্যদের কাছে বিগ বস নামে পরিচিত। ফ্রাঙ্কি বাংলাদেশ নাইজেরিয়ান কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট। গত ৯ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করা ফ্রাঙ্কি ৯ মাস আগে দেশ ছেড়ে নিজ দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ক্যামেরুনের নাগরিক কেলভিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কেলভিন চলতি মাসের ২০ তারিখ আরেক বিদেশি নাগরি মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কেলভিন এই মাদক চক্রের অন্যতম সদস্য। তিনি বাংলাদেশে বসে মাদকের দেশি বিদেশি সদস্যদের সমন্বয় করতেন। গত ২৪ তারিখ কোকেনসহ মালাওয়ের নাগরিক গ্রেপ্তারের খবরে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কেলভিন। এই প্রস্তুতিকালেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ফারুকী আরও বলেন, মাদক চক্রের প্রধান ডন ফ্রাঙ্কির বাংলাদেশি সহযোগী রনিকে গ্রেপ্তার করার পর চক্রের অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায় ডিএনসি। রনি এই সিন্ডিকেটের বাংলাদেশি সমন্বয়কারী। সেও গার্মেন্টস শিল্পের বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করত। তার কাজ ছিল মাদক বহনকারীদের দেশে প্রবেশের প্রয়োজনীয় ইনভাইটেশন, হোটেল বুকিং ও ভিসা পাওয়ার কার্যক্রমে সহযোগিতা করা। ম্যাসপেক্স লিমিটেড নামের কথিত একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এই আমন্ত্রণপত্র ইস্যু করা হতো। রনির মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য প্রযুক্তির ডিভাইস বিশ্লেষণ করে একাধিক ভুয়া ইনভাইটেশন লেটার পাঠানো ও চক্রের প্রধান ফ্রাঙ্কির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া ফ্রাঙ্কির অফিসে অভিযান চালিয়ে বারিধারার একটি বাসা থেকে কোকেন চোরাচালান সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং কোকেন পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ল্যাগেজ পাওয়া গেছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও বাড়ির মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ফ্রাঙ্কি দীর্ঘ ৯  মাস আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে। তার অবর্তমানে ফ্রাঙ্কির ভাই উইসলি ও তাদের ম্যানেজার আসাদুজ্জামান আপেল এই বাসায় থেকে ব্যবসা দেখাশুনা করত। কোকেন চালান আটকের সংবাদ পেয়ে তারা আত্মগোপন করে। পরে অভিযান চালিয়ে আপেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আপেল ডিএনসিকে জানিয়েছে, বাংলাদেশে কোকেনের চালান প্রবেশের পরে পুনঃপ্যাকেজিং, নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা দায়িত্ব ছিল তার। তার ডিজিটাল ডিভাইস বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফ্রাঙ্কির ভাই উইসলি কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করে চলে গেছে। পরবর্তীতে আপেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্কার, পডস্কিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এমএসি/জেডএস