‘আমরা কি সবাই ফেরেশতা?’
‘ঘটনাটির ভিডিও না হলে কিন্তু কেউ কিছুই জানত না, কিছুই হতো না। এ রকম কতকিছুই তো ঘটে যাচ্ছে আমাদের জীবনে। সব ভিডিও করা হলে তো সুইসাইড করা ছাড়া কারো উপায় থাকত না। আমরা কি সবাই ফেরেশতা? চামড়া কেন এত পাতলা আমাদের?’
‘মুভমেন্ট পাস’ ও ‘আইডি কার্ড’ নিয়ে চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তার বাগবিতণ্ডার ঘটনা প্রসঙ্গে সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এসব কথা লেখেন আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবীর মিলন।
বিজ্ঞাপন
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনাকে আর না টানি, প্লিজ। অনাকাঙ্ক্ষিত এবং বিব্রতকর একটি মুহূর্ত যাদের নিয়ে, তারা কিন্তু জীবনের অনেক ক্ষেত্রে হয়তো অনেক মানবিক। অনেক মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন, অনেকের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়েছেন, অনেকের জীবন বাঁচিয়েছেন। এরাই কিন্তু আমাদের ভাই, আমাদের বোন। এত জাজমেন্টাল না হয়ে ভুলে যাই সবকিছু। সহমর্মিতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসা নিয়ে মিটিয়ে ফেলি বিরোধ আর জিঘাংসা।’
‘পারভারশনের অতল গভীরে নিমজ্জিত আজ আমরা সবাই। বাচ্চারা কি শিখবে আমাদের থেকে আজ! কি শেখাচ্ছি আমরা তাদের! বুকে হাত দিয়ে কেউ বলতে পারবেন, দেশের কোনো পেশার মানুষের কাছ থেকে ক্ষতির চেয়ে অনেক অনেক বেশি উপকৃত হননি! তাহলে এত পেশা বিদ্বেষ কেন সবার মনে!’
তিনি লেখেন, ‘কিছুই হয়নি। ডাক্তার, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট সবাই ভালো। অনেক ভালো রেকর্ড আছে তাদের। টেম্পার বা আচরণগত পদ্ধতির সমস্যার কারণে হয়ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। আর কিছু না। এই মাটিতে যত খারাপ কাজ হয়, অসংখ্য ভালো মানুষ এবং তাদের ভালো কাজ না থাকলে এই মাটি অনেক আগেই ধসে যেত।’
‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, আমি মিথ্যা বলছি না বা অনিয়ম করছি না। আসলে সেটাই হওয়া উচিৎ। এই মহান বিষয়টিকে আর খাটো না করি, ভাইরাল সাবজেক্ট করে ঝাঁপিয়ে না পড়ি! বর্তমানে কোভিড প্যানডামিক নিয়ে ভয়াবহ বিপদে আছি আমরা। এর মাঝে জাতিগতভাবে পরনিন্দা, জিঘাংসা, গিবতের চর্চা ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনবে হয়ত আমাদের জীবনে। প্লিজ, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, আমাদের সন্তানদের জন্য ভাল কিছু রেখে যাই আমরা।’
রোববার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে সরকারি বিধিনিষেধের পঞ্চম দিনে ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ান চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তা। তিনপক্ষের বাগবিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ উৎসুক জনতার নানা পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী সচিব শেখ মামুনুর রশিদ ও এলিফ্যান্ট রোডে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এ কাইয়ুমের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান ডা. সাঈদা শওকত জেনি। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। এ ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
উল্লেখ্য, ‘তিন মাসে দুর্নীতি দূর করতে ১০ কর্মকর্তার উইং চান অতিরিক্ত সচিব’- রেলপথ মন্ত্রণালয়ে থাকাকালে তাকে উদ্ধৃতি দিয়ে খবর প্রকাশ হয় দেশের একটি শীর্ষ অনলাইন গণমাধ্যমে। এ বক্তব্যের জন্য গত বছরের ছয় আগস্ট তাকে ওএসডি করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। সেই মামলায় দণ্ড হিসেবে তাকে ১ মার্চ ‘তিরস্কার’ করা হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব কবীর মিলন। কিছু সময়ের জন্য ছিলেন কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও। ওই সময় তিনি খাদ্যে ভেজাল ও নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে আলোচিত হোন।
এসএইচআর/এমএইচএস/জেএস