দেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামে ট্রান্সজেন্ডারদের কার্যকলাপ প্রচারের মাধ্যমে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ।

তিনি বলেছেন, ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, বিকৃত যৌনাচার, সমমৈথুন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসে আঘাতের মাধ্যমে দণ্ডবিধির ২৯৫-এ ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে, যা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও একটি বিকৃত রুচির সম্প্রদায় এদেশে সমকামিতাকে প্রমোট করে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে নতুন কারিকুলামে অসঙ্গতি দূরীকরণ, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন, মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়ন এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে স্বপদে পুনর্বহালের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সমকামিতা একই লিঙ্গের দুজন মেলামেশা করার নাম। যা কোনো পশুও করে না। অথচ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ট্রান্সজেন্ডারের নামে শিক্ষার্থীদের ওইপথে ঠেলে দিচ্ছে। এধরনের বিকৃত যৌনাচার ৯২ ভাগ মুসলমানের এদেশে চলতে দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে শরীফার গল্পে শরীফ আহমেদ একজন ছেলে এবং তার সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অনুযায়ী সে একজন ছেলে। কিন্তু সে মনে করে যে, সে একজন মেয়ে। তাই তার নাম পরিবর্তন করে রেখেছে শরীফা। এখানে স্বীকার করা হয়েছে যে, শরীফ আহমেদের শারীরিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধুমাত্র মানসিকভাবে মনে করে সে একজন মেয়ে। এভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিকৃত যৌনাচারের দিকে ঠেলে দেওয়ার দূরভিসন্ধি রুখে দাঁড়াতে হবে।

মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে শিক্ষকতার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বাধীনভাবে একটি দেশের সংবিধান বিরোধী ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতেই পারে। সামাজিক, ধর্মীয় ও মানবতাবিরোধী বিষয়ে কথা বলায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা শিক্ষক সমাজের জন্য এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। অনতিবিলম্বে তাকে স্বপদে বহাল করার পাশাপাশি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জাতি কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার বিগত ১৫ বছর যাবৎ শিক্ষা থেকে ইসলাম তুলে দিতে শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। এ শিক্ষা ব্যবস্থা কোনভাবেই ৯২ ভাগ মুসলমানের শিক্ষা সিলেবাস হতে পারে না।

তিনি বলেন, বিগত ২০১৮ সালের নিশিরাতের অবৈধ সরকার এবার ডামি নির্বানের নামে দেশকে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি তুলে দিতে উগ্রবাদি একজনকে শিক্ষামন্ত্রী বানিয়েছে। যে নাকি জনগণের গাড় মটকায়। এমন ব্যক্তি কীভাবে শিক্ষামন্ত্রী হতে পারে। তিনি সমকামিতা রুখে দিতে সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান।

জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নাছির উদ্দিন খান বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে শিক্ষার অসারতা এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় তাকে চাকুরিচ্যুত করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। এতে করে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষের দৈন্যতা প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা সমকামিতাকে এদেশে প্রমোট করছে। তিনি আসিফ মাহতাবকে পুনর্বহালের দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা এবিএম জাকারিয়া বলেন, শিক্ষাকে আদর্শবিহীন করার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষা থেকেও ছাত্রদের দূরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষা কারিকুলাম বাদ দিতে হবে এবং দেশের অধিকাংশ মানুষের চিন্তাচেতনার আলোকে শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। তিনি মাদরাসা শিক্ষা সিলেবাস থেকে ঢোল-তবলা, বাঁশির ছবি প্রত্যাহারের দাবি জানান।

জেইউ/এসএম