রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এনজিও প্রতিষ্ঠান সিদীপের নিরাপত্তাকর্মী জুয়েল মিয়াকে (২০) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরেক নিরাপত্তাকর্মী আক্তার হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে ঢাকার নাজিরাবাজার এলাকার একটি কারখানা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আক্তার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

এইচ এম আজিমুল হক জানান, মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানতে পারে— মিরপুর রোডের ২২/৯ নম্বর বাড়িতে এনজিও সিদীপের অফিসের নিচ তলায় পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমে নিরাপত্তাকর্মী জুয়েল মিয়ার হাত-পা বাঁধা মরদেহ পড়ে আছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করে। পরে এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

তিনি বলেন, ২৩ জানুয়ারি ভোরে নিরাপত্তাকর্মী আক্তার হোসেন একটি লাঠি হাতে ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বে চেয়ারের উপরে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে থাকা জুয়েল মিয়ার দিকে এগিয়ে যান। একপর্যায়ে লাঠি দিয়ে জুয়েল মিয়াকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। পরবর্তীতে আক্তার জুয়েলের হাত ধরে টেনেহিঁচড়ে বিল্ডিংয়ের পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের দিকে নিয়ে যায়। এ সময়ও আক্তার তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে জুয়েলকে দফায় দফার আঘাত করতে থাকে। এ সময় জুয়েলের মাথা, চোখ, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করে জুয়েলের হাত বেঁধে কম্বল মুড়িয়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের ভেতর ঢুকিয়ে বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয় আক্তার।

ঘটনার পর আক্তার হোসেন আত্মগোপনে চলে যায়। প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাজিরাবাজার এলাকার একটি কারখানা থেকে আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযুক্তকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে এ কর্মকর্তা বলেন, আক্তার হোসেন বিগত দেড় বছর ধরে সিদীপ এনজিওতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছে। জুয়েল মিয়া গত ১ জানুয়ারি ওই প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে যোগদান করেন। ডিউটি চলাকালে প্রায় সময় অফিসের বাইরে যেতে চাইত জুয়েল মিয়া। কিন্তু এতে বাধা দিত আক্তার হোসেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুজনের মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আক্তার হোসেন আগে থেকে এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরির সুবাদে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে এবং সে এটির সুযোগ নিয়ে অন্যদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করত। ভিকটিম জুয়েল মিয়া এটি মেনে নিতে পারেনি।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আক্তার তার বান্ধবিকে রাতে অফিসে নিয়ে আসে এবং ভিকটিম জুয়েল তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম জুয়েল মিয়া আসামি আক্তার হোসেনকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায় এবং কর্তৃপক্ষকে বলে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম বিরোধ জন্মায়।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন (২৩ জানুয়ারি) আক্তার, ভিকটিম জুয়েল ও সঙ্গীয় দুজন গার্ড রাত ৮টায় ডিউটি শুরু করে। আনুমানিক রাত ১১টায় জুয়েল মিয়া আসামি আক্তারের মোবাইল কেড়ে নেয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর রাত আনুমানিক ১টায় আক্তার হোসেন অফিস পিওন সতেজ চাকমা ও আল আমিনকে বিষয়টি জানালে তারা নিচে আসে। এ সময় ভিকটিম জুয়েল মিয়া মোবাইলটি আল আমিনের কাছে জমা দেয়।

কয়েক ঘণ্টা পর ভোর ৫টার দিকে চেয়ারের উপরে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় জুয়েল মিয়াকে একটি লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে আসামি আক্তার। হত্যার পর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে লাশটি পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমে নিয়ে যায় এবং রুমটি বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার পাইপটি ফেলে দেয়।

হত্যাকাণ্ডের সময় ভবনের বাকি দুজন নিরাপত্তাকর্মী চালকের রুমে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

এমএসি/এমজে