ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। প্রিমিয়াম সফটওয়্যার দেওয়ার নামে কৌশলে এ প্রতারণা চালাত তারা। সম্প্রতি এ চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর উঠে আসে এসব তথ্য।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরার ৬ নং সেক্টর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।

গ্রেপ্তাররা হলেন- শামীম আহম্মেদ (৩২), জাহিদুল ইসলাম (২৪), মাহিদুল হক ওরফে মাহাদ (৩০), আশরাফুল ইসলাম (২৬), এহসান মাশফী (২৪) ও রনি সরদার (২৮)। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ছয়টি এসএসডি কার্ড, চারটি হার্ডডিস্ক, চারটি ট্যাব ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

এটিইউ’র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইং) ওয়াহিদা পারভীন জানান, ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ের খুব জনপ্রিয় একটি পেশা। নিজের সৃজনশীলতাকে পুঁজি করে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইট বা মার্কেটপ্লেসে সাফল্যের সাথে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন অনেকে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কোর্স করানোর আড়ালে কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান আপস্পট অ্যাকাডেমি। প্রতিষ্ঠানটির ফেইসবুক পেইজে সিপিএ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে প্রথম দিন থেকেই দৈনিক ১০ থেকে ৪০ ডলার আয় করার প্রলোভন দেখিয়ে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং তার সাথে বিভিন্ন ফেইক ভিডিও রিভিউ ও পোস্ট করা হয়।

প্রতারণার কৌশল প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা বলেন, সিপিএ মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রিমিয়াম রাশিয়ান সফটওয়্যার টুলস প্লাগইন করার কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫০০ টাকা করে চাওয়া হয় এবং এই টাকা পরিশোধ করলে তাদের ক্লাসে এনরোল করা হবে বলা হয়। আগ্রহী প্রশিক্ষণার্থীরা বিকাশে ২৫০০ টাকা পরিশোধ করলে তাদের সিপিএ মার্কেটিংয়ের উপর দায়সারাভাবে কিছু রেকর্ডেড ও কিছু লাইভ ক্লাস করানো হয়। তা ছাড়া যেসব প্রিমিয়াম টুলসের কথা বলে তারা বিকাশে টাকা নেয় সেগুলো দেওয়া হয় না। প্রিমিয়াম সফটওয়্যার টুলসের নামে তারা কিছু ফ্রি সফটওয়্যার সরবরাহ করে, যা দিয়ে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত আয় করতে সক্ষম হয় না।

তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু ভুক্তভোগী তাদের মাধ্যমে অনলাইনে কিছু ডলার আয় করতে পারলেও ওয়েবসাইট আপডেটের কথা বলে অর্জিত ডলার কেটে রাখা হয়। প্রতিষ্ঠার পরবর্তী দুই বছরে আপস্পট অ্যাকাডেমি সিপিএ মার্কেটিংয়ের উপর এভাবে ১৫৬টি ব্যাচের ট্রেনিং প্রদান করেছে। যার প্রতিটিতে প্রায় ৩০০ জন করে অংশগ্রহণকারী ছিল।

অনেক ভুক্তভোগী জানান, ফ্রিলান্সিং কোর্স পরিচালনার আড়ালে অ্যাকাডেমির একমাত্র উদ্দেশ্য— প্রিমিয়াম সফটওয়্যার দেওয়ার কথা বলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া।

আপস্পট অ্যাকাডেমির সিপিএ মার্কেটিং কোর্সের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া ভুক্তভোগীদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে, যার সদস্য সংখ্যা প্রায় এক হাজারের উপরে। তাদের একজন মো. রাহিম মন্ডল এ অভিযোগ করেন।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

জেইউ/এমজে