রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। এতে করে বাড়ছে শীতজনিত নানান রোগ। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে রোগীর চাপ বেড়েছে। এখানে পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় বাধ্য হয়ে মেঝে ও করিডোরে অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা।

২৬০০ শয্যার এই হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওয়ার্ডে শয্যা না পাওয়ায় রাতদিন কনকনে শীতে মেঝে ও করিডোরে শুয়ে থাকছেন তারা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শীতে কিছুটা চাপ বাড়লেও রোগীদের সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শিশু ওয়ার্ডে সরেজমিনে দেখা যায়, অতিরিক্ত রোগীর চাপে শয‍্যা না পেয়ে মেঝেতে অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুরা। মেঝে তীব্র ঠান্ডা থাকায় বেশ নাকাল অবস্থা তাদের। 

ওয়ার্ডের সামনে মেঝেতে অবস্থান করে নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের চারজনকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। জবেদা খাতুন নামে এক নারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তিন দিন আগে ওরা কুমিল্লা থেকে চিটাগাং রোডে আসে। সেখানে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় অটোরিকশায় থাকা আমার মেয়ে ও নাতিসহ আমাদের একই পরিবারের সাতজন আহত হয়। 

তিনি আরও বলেন, শিশু ওয়ার্ডের সামনে আমার মেয়েসহ চারজন ভর্তি রয়েছে। কনকনে এই শীতে কোনোভাবেই মেঝেতে বসে বা শুয়ে থাকতে পারছি না। তীব্র ঠান্ডার কারণে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে শুয়ে-বসে থাকা খুবই কষ্টকর। ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে নিয়ে মেঝেতে খুবই কষ্টে অবস্থান করছি। চার দিন ধরে এখানে থেকেই চিকিৎসা চলছে।

কথা হয় এক শিশুর মা আয়েশা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বাচ্চার অনেক ঠান্ডা লেগেছে এবং নিশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে দুইদিন আগে এখানে ভর্তি করিয়েছি। ভর্তি করালেও এখনো কোনো শয্যা পাইনি। নিরুপায় হয়ে ওয়ার্ডের ভেতরে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে ছোট্ট শিশুর চিকিৎসা করাচ্ছি। এখানে ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ শিশুকেই মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। আমরা না হয় মেঝেতে থাকতে পারি, কিন্তু ছোট বাচ্চাদের তো কষ্ট হয়।

হাসপাতালের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডের সিঁড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ সোলেমান মিয়া। তার ছেলে সুমন বলেন, স্ট্রোক করে আমার বাবা ২০০ নম্বর ওয়ার্ডের সিঁড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সিঁড়ির মেঝে অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়ায় বাবার বুকে কফ জমে যাচ্ছে। তার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো শয্যা পাওয়া যায়নি। ঠান্ডায় আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। সিঁড়ি দিয়ে সবসময় মানুষ চলাচল করে, কোথাও ঠাঁই না পেয়ে সিঁড়িতেই পাটি বিছিয়ে বাবাকে নিয়ে আছি।

মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডেও রোগীর উপচে পড়া ভিড়। শয্যার তুলনায় অতিরিক্ত রোগী হওয়ায় মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজনকে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে তীব্র সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৬০ বছর বয়সী সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছি। আমার মতো অনেকেই এই ঠান্ডায় শয্যা না পেয়ে পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে শৈত্যপ্রবাহের কারণে সর্দি-কাশির রোগী বেড়ে গেছে। এখানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই সর্দি-কাশির রোগী। নিউমোনিয়ার রোগীও বেড়েছে। শীতকালে অনেক ডায়েরিয়ার রোগী থাকে, কিন্তু এবার ডায়েরিয়া রোগী তেমন একটা নেই।

তিনি বলেন, যাদের হাঁপানি ও সিওপিডি রোগ আছে, শীতকালে এগুলো একটু বেড়ে যায়। এসব রোগীদের সামাল দিতে আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আউটডোরের রোগীদের আমরা নিয়মিত চিকিৎসা দিয়ে তাদের ছেড়ে দিচ্ছি। এখানে রোগী যে পরিমাণে বেড়েছে, সেটি আমরা ম্যানেজ করতে পারছি। আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আপনারা জানেন ঢাকা মেডিকেল ২৬০০ শয‍্যার হাসপাতাল হলেও আমরা শয্যার থেকেও অনেক অতিরিক্ত রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। সারা দেশ থেকে রোগীরা আমাদের এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। এখানে যেসব রোগী আসে, আমরা কিন্তু কাউকেই চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠাই না। অনেকে মেঝেতে থাকছেন,  শীতে কষ্ট পাচ্ছেন... কিন্তু আমরা তাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। অন্যান্য হাসপাতালে শয‍্যা ফাঁকা না থাকলে তারা রোগীদের ভর্তিই নেয় না। আমরা কিন্তু সেটি করছি না। আমাদের এখানে ভর্তির উপযুক্ত হলেই রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়।

এসএএ/কেএ