চালের বাজার স্থিতিশীল ও দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কারওয়ান বাজারের পাঁচটি পাইকারি চালের দোকানে দেড় ঘণ্টাব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। অভিযানে বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়া গেলেও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। দামের তারতম্য ও মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্স থাকার পরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ১২টা থেকে কারওয়ান বাজারে পাইকারি চালের বাজারে এই অভিযান শুরু হয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে। অভিযান চলে দুপুর ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত।

অভিযানে সরেজমিনে দেখা যায়, কারওয়ান বাজারে পাইকারি চালের বাজারের বি-বাড়িয়া রাইস এজেন্সি নামে একটি দোনা থেকে অভিযানটি শুরু হয়। অভিযানের শুরুতে বি-বাড়িয়া রাইস এজেন্সি তাদের লাইসেন্স দেখাতে পারেনি। লাইসেন্স দেখাতে না পারলেও তাদের শুধু সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পর বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সি নামে দোকানে পাওয়া যায় মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্স। বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সিকেও সতর্ক করে ছেড়ে দেয় অভিযান পরিচালনা করা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের টিম।

এরপর একে একে অভিযান পরিচালনা করা হয় জনতা রাইস এজেন্সি, আল-মদিনা রাইস এজেন্সি ও কিশোরগঞ্জ রাইস এজেন্সি। এসব দোকানে ক্রয় ও বিক্রির মূল্যের মধ্যে কিছুটা তারতম্য দেখা যায়। তবে দামের তারতম্য দেখা গেলেও এসব দোকানকে শুধু সতর্ক করা হয়। তাদের বলা হয় ভবিষ্যতে দামের তারতম্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযানের বিষয়ে মেসার্স জনতা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী হাজি মো. আবু ওসমান বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাদের মূল্য তালিকা নিয়মিত আপডেট করাসহ প্রতিটি চালের ওপর আলাদা করে মূল্য দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

অভিযানের কারণে চালের দাম কমেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযানের কারণে চালের বাজার স্থিতিশীল আছে। নতুন করে আর চালের দাম বাড়েনি। বরং বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ২০-৫০ টাকা কমেছে। 

অভিযান শেষে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. লুৎফর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আজ অভিযান পরিচালনা করে দেখছি বিক্রেতারা কত টাকা দিয়ে চাল কিনেছেন এবং কত টাকায় চাল বিক্রি করছেন। ক্রয় ও বিক্রয়ের মধ্যে ব্যবধানটা সহনীয় এবং যৌক্তিক কিনা তা জানার জন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে আমরা আরও দেখেছি প্রতিটি দোকানে যত ধরনের চাল বিক্রি হচ্ছে সেসব চালের সঠিক মূল্য টানানো হয়েছে কি না। কত তারিখে চাল কেনা হয়েছে এবং কত তারিখে বিক্রি হচ্ছে খরচসহ সেসব বিষয় যৌক্তিক কি না তাও আমরা অভিযান পরিচালনা করে দেখেছি।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া অভিযানে আমরা বেশ কিছু কাগজপত্র যাচাই করেছি। দোকানের লাইসেন্স ঠিক আছে কি না আমরা তা যাচাই করেছি। কোথায় ভুল ত্রুটি পাওয়া গেছে। সেসব বিষয়ে দোকানিদের আমরা সতর্ক করেছি। অভিযানে আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি তারা যদি ব্যবসা করতে চাই তাহলে জেনে তাদের সব কাগজপত্র সঠিক থাকে। মূল তালিকা স্বচ্ছভাবে লিখতে ব্যবসায়ীদের আমরা নির্দেশনা দিয়েছি অভিযানে।

বাজার মনিটরিংয়ের ফলে চালের বাজারে দাম নিম্নমুখী দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে চালের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। প্রতিটি বাজারই চালের দাম কিছুটা কমেছে।

কম দামে কিনে বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে কি না, অভিযানে এসব বিষয় পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম আজকে তেমনভাবে অভিযানে পাওয়া যায়নি। মোটামুটি যৌক্তিক দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। কিছু দোকানে কিছুটা দামের তারতম্য দেখা গেছে। দামের বিষয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি যাতে দামে তারা সহনীয় পর্যায়ে রাখে।

বেশি কিছুদিনের অভিযানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে দামের তারতম্য পাওয়া গেলেও ব্যবসায়ীদের শুধু সতর্ক করা হচ্ছে। এর পরেও যদি ব্যবসায়ীরা সতর্ক না হয় তাহলে খাদ্য মন্ত্রণালয় কী ব্যবস্থা নেবে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি তারা সতর্ক না হয় তাহলে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। চাল বিক্রির ক্ষেত্রে যেসব বিধিবিধান আছে সেগুলো যদি ব্যবসায়ীরা না পালন করেন তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে। নিয়ম মেনে ব্যবসা করার জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। তার পরেও যদি ব্যবসায়ীরা বড় কোনো অনিয়ম করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এমএসি/জেডএস