লকডাউনে প্রজনন ক্ষমতা বেড়েছে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের
করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ চলছে। সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, রাজধানীতে বন্ধ আছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। করোনাকালে প্রজনন ক্ষমতা বেড়েছে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের।
এ প্রসঙ্গে চিড়িয়াখানার পরিচালক মো. আবদুল লতিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘লোকজনের সমাগম থাকলে প্রাণীরা বিরক্ত হয়। লোকজন না থাকায় খুব আরামে খাবার খাচ্ছে প্রাণীগুলো। ভালো খাবার পাচ্ছে, ইমিউনিটি ভালো আছে, প্রজনন ক্ষমতা বেড়েছে তাদের। গতবারের লকডাউনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এরকম পরিস্থিতিতে প্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটার ফল আমরা পাব পাঁচ থেকে ছয়মাস পর।’
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে প্রথমবারের মতো লকডাউনের পর চিড়িয়াখানায় পশুপাখির সন্তান জন্ম দেওয়ার হার বেড়েছিল। ওই সময় লকডাউনের চার মাসে ৫০টি বাচ্চা প্রসবের ঘটনা ঘটেছিল, যা চিরিয়াখানার ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যক। ওই সময় চার মাসে জিরাফ, জেব্রা, গাধা, অস্ট্রিচ ও ময়ূরের ডিম থেকেও বেশ কিছু বাচ্চা ফুটানো হয়েছে।’
মো. আবদুল লতিফ বলেন, ‘এবারের লকডাউনে এখনও কোনো প্রাণী বাচ্চা জন্ম দেয়নি। গত ফেব্রুয়ারির দুই তারিখের পর থেকে জেব্রা, জলহস্তি ও ঘোড়া বাচ্চা দিয়েছে। এছাড়া চিত্রা হরিণ সপ্তাহে দুইটা থেকে তিনটা বাচ্চা দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাঘ ও সিংহগুলো আগের থেকে অনেক ভালো আছে। বর্তমানে তাদের ওজন বেড়ে গেছে। ওজন বাড়ার কারণে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাবে। তাই বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে চারদিন হলো তাদের দুই কেজি করে খাবার কম দিচ্ছি। ওজন কমলে বাঘ-সিংহ প্রজননে আসতে পারবে।’
মো. আবদুল লতিফ আরও বলেন, ‘সরকারি বিধিনিষেধকালে আমাদের সব অফিসারদের শিফটিং ডিউটি দিয়েছি। আর যেসব কর্মচারী অনেক দূর থেকে আসে তাদের সপ্তাহে তিনদিন আসতে বলেছি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, নিরিবিলি পরিবেশ ভালোই উপভোগ করছে বাঘ-সিংহ-বানর-হরিণরা। দর্শনার্থী না থাকায় প্রকৃতির সঙ্গে খেলায় মেতেছে প্রাণীরা। খাবারও খাচ্ছে ঠিকমতো। দর্শনার্থীর কোলাহল না থাকায় খাঁচাবন্দি পশু-পাখিদের দিন কাটছে আনন্দে।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে বানরের ছুটাছুটি। জলহস্তি কাদায় গড়াগড়ি দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে চোখ খুলতেও যেন চরম আলস্য। সিংহ আর বাঘগুলো সকালের খাবার খেয়ে খাঁচার ভেতর গড়াগড়ি দিচ্ছে। কেউবা চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করছে। ডাকলেই চোখ মেলে আবার অলস শরীরে চোখ বন্ধ করছে।
জাতীয় চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় হরিণের বসবাস। এদের মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় মায়া ও চিত্রা হরিণও আছে। দল বেঁধে সবুজ ঘাস-পাতা খাচ্ছে হরিণেরা। কিছু কিছু হরিণ রোদ সহ্য করতে না পেরে গাছের নিচে শুয়ে আছে।
চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রাণীর দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউন হওয়াতে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের কোনো কোলাহল নেই। দর্শনার্থী থাকলে ভয়ে প্রাণীগুলো জড়সড় হয়ে খাঁচার মাঝখানে বসে থাকত। ঠিকমতো খাবারও খেতে পারত না। বর্তমানে প্রাণীগুলো আনন্দে আছে। ভালো আছে, সুস্থ আছে। তারা খাঁচায় স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করছে, কোনো অস্বস্তি নেই।
১৯৭৪ সালে ১৮৬ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা দেশের সবচেয়ে বড় এই মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। এখানে ১৯১ প্রজাতির মোট ২ হাজার ১৫০ প্রাণী রয়েছে। এখানে মাংসাশী আট প্রজাতির ৩৮টি প্রাণী, ১৯ প্রজাতির বৃহৎ প্রাণী (তৃণভোজী) ২৭১টি, ১৮ প্রজাতির ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ১৯৮টি প্রাণী রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ১০ প্রজাতির সরীসৃপ ৭২টি, ৫৬ প্রজাতির ১ হাজার ১৬২টি পাখি, অ্যাকুরিয়ামে রক্ষিত ১৩৬ প্রজাতির ২ হাজার ৬২৭টি মৎস্য। সব মিলিয়ে রয়েছে ১৩৭টি পশুপাখির খাঁচা।
এসআর/এইচকে