জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীদের অধিকার সুরক্ষায় সবার আগে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জনমনে তাদের নিয়ে যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, তা নিরসনে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। 

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সম্মেলন কক্ষে ‘ট্রান্সজেন্ডার, হিজড়া ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর লিঙ্গ পরিচয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। 

তিনি বলেন, সমাজে বসবাসরত অন্য সবার মতো জন্মগতভাবে শারীরিক যে ব্যতিক্রম, তার জন্য তারা বিন্দুমাত্রও দায়ী নয়। বরং সৃষ্টিরই একটি খেয়াল। বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক সক্ষমতায় তারা সমান যোগ্যতার অধিকারী। সমাজের বঞ্চনার কারণেই তারা একটি দুঃখী জনগোষ্ঠী। তারাও মানুষ, এ বোধটা জনমনে জাগাতে হবে। একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, তারা বিভিন্নভাবে সমাজে বঞ্চনার শিকার হয়। পরিবার থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়। 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রান্সজেন্ডারদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, তাদের নিয়ে সমাজে যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, এটি তার বহিঃপ্রকাশ। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আমরা পত্র দিয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীদের অধিকার সুরক্ষাকল্পে আইনের খসড়া করা হয়েছে যা অনতিবিলম্বে প্রণয়ন করা হবে বলে আমি আশা করি। আইনি সহায়তার জন্য একটি কার্যকর আইনের প্রয়োজন রয়েছে। 

ড. কামাল বলেন, শুধু আইন করলেই হবে না। আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে আইনের প্রয়োগ না হওয়া। কাজেই, আইন করে তার সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড গঠন করে সঠিক কর্মপরিধির দিকে এগিয়ে গেছে। আমাদেরকেও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা বলেন, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগঠিত হয়ে কাজ করতে হবে। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি বলেই তারা এখনও বিভিন্ন স্থানে বঞ্চনা এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সংবিধান অনুযায়ী, প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার সুরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এ জন্য সবার আগে এ জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত হতে হবে এবং এর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের  মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, মানবাধিকারের মূলনীতি হলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। বর্তমান সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীদের অধিকার সুরক্ষাকল্পে আইন প্রণয়নের ব্যাপারে অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব রাখেন। অতি শিগগিরই আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আশ্বাস প্রদান করেছেন। 

সভায় হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীদের প্রতিনিধি ও কমিশনের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন। সভার আলোচনায় এই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অত্যন্ত আশান্বিত হন। এ সময় তাদের বঞ্চনা দূর করার ক্ষেত্রে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়। 

জেইউ/কেএ