মাঘের শীতে কাবু ঢাকাবাসী, হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত জনজীবন
‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’—গ্রাম বাংলার প্রচলিত এমন লোককথা এবার যেন সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে। অবশ্য শীতের মৌসুমের শুরু থেকেই এ বছর ঠান্ডার প্রকোপ অনেকটা বেশি। অন্যান্য বছর উত্তরের জনপদ শীতে বিপর্যস্ত হলেও এবার এর ছোঁয়া পেয়েছেন রাজধানীর মানুষজনও। পৌষ মাসের শেষ সময় থেকেই শৈত্যপ্রবাহ, ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ঢাকার জনপদ।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) বাংলা মাঘ মাসের ৮ম দিনে সকাল হয়ে বেশ খানিকটা সময় পার হরেও রাজধানীর আকাশে দেখা নেই সূর্যের। কিছুটা কুয়াশা, ঠান্ডা আর হিমেল হাওয়ার প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। কর্মদিন হওয়া সত্ত্বেও রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি কিছুটা কম।
বিজ্ঞাপন
তবে সুসংবাদ নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ দিনের অধিকাংশ সময়ই ঢাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে কুয়াশাচ্ছন্ন থাকতে পারে।
সোমবার সকালে প্রকাশিত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময়ের মধ্যে হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আর উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬-১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। তাছাড়া দিনের তাপমাত্রাও সামান্য হ্রাস পেতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
এমন অবস্থায় বেশ বিপাক পড়েছেন রাজধানীবাসী। সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কর্মব্যস্ত এই এলাকায় মানুষের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। যারা বের হচ্ছেন তারাও পর্যাপ্ত শীতের কাপড় পড়ে বাইরে বের হয়েছেন। এসব এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেটে উদ্বিগ্নতা নিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অভিভাবকদের।
ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের সামনে অপেক্ষমাণ অভিভাবক সেলিনা আহমেদ বলেন, সকাল সাড়ে সাতটায় সকাল শিফটের ক্লাস শুরু হয়। তখন আরো বেশি ঠান্ডা থাকে। ক্লাসরুমেও ঠান্ডা বেশি থাকে। সেজন্য কিছুটা টেনশন তো হয়ই। আর বাচ্চারা বেশি কাপড় গায়েও রাখতে চায় না।
আবার শীতের কারণে সকালে সড়কে পর্যাপ্ত মানুষ না আসায় ঘাটতি পড়েছে নিম্নের মানুষজনের আয়েও। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে রিকশাচালক আব্দুল ওয়াহীদ বললে, সকালে স্কুল-কলেজ, অফিস এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া মানুষদের কাছ থেকে আমাদের সারাদিনের অর্ধেক ইনকাম হয়ে যেত। কিন্তু এখন সকালে বসে থাকতে হচ্ছে মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে দেরিতে বের হয়। যার কারণে আয়েও টান পড়েছে। আর ঠান্ডা বাতাসে রিকশা চালাতেও কষ্ট হচ্ছে। বেশিক্ষণ রিকশা চালানো যাচ্ছে না।
অপরদিকে ঠান্ডার কারণে এই সাত সকালেই ফুটপাত থেকে মানুষজনকে মাফলার-কানটুপি কিনতে দেখা গেছে। নিউমার্কেটের চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে একজনকে দেখা গেল মাফলার, কানটুপি বিক্রি করছেন। বিক্রেতা আরিফুল বলেন, সকালে যারা ঘর থেকে বের হয়েছে তাদের অনেকেই আমার এখান থেকে মাফলার এবং কানটুপি কিনছেন। এখানে অনেক মার্কেট। সেগুলো খুললে আমরা কাস্টমার (ক্রেতা) কম পাই। সেজন্য আমি প্রতিদিন সকালবেলা এখানে দাঁড়াই। ভালোই বিক্রি হয়।
আরএইচটি/এমএসএ