বাজার ও গলিতে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের পঞ্চম দিন আজ। এরই মধ্যে রাস্তায় বেড়েছে যানবাহন ও মানুষের চাপ। রোববার (১৮ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অন্য দিনের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনেও দেখা গেছে চরম অনীহা। অনেককেই প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে গিয়ে গলিতে বসে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই তারা আবার ঘরে ঢুকে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর এলাকার রূপনগর, দুয়ারিপাড়া, মিরপুর-১, ২ ও ১০ নম্বর এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর-১ কাঁচা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতাকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব।
জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বিকাল ৩টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার অনুমতি আছে। এর আগে পুলিশ কিছুই বলবে না। বিকাল ৩টার পর পুলিশ খুব সমস্যা করে। দোকান খোলা রাখলেই মিটার নিয়ে যায়।
বেলাল নামে এক ক্রেতা বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ হলেও খাওয়া তো বন্ধ নেই। বর্তমানে বাজারই করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় রাজধানীর বাজারগুলোয় নজরদারি বাড়ানো উচিত।
রূপনগরের এক গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা জামিল বলেন, বাসায় থাকতে ভালো লাগে না। কতক্ষণ বাসায় থাকা যায়? তারপরও একটু বের হলে পুলিশ এসে লাঠি নিয়ে তাড়া করে। লকডাউনের ফলে কাজকর্ম সব বন্ধ। লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে আমরা মধ্যবিত্তরা সমস্যায় পড়ে যাব।
ওই এলাকায় দায়িত্বরত এসআই হেদায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। মানুষকে কোনোভাবেই ঘরে রাখা যাচ্ছে না। টহলের সময় কোন মানুষ পাই না কিন্তু টহল ছাড়া গেলে দেখা যায় মানুষ আর মানুষ। লকডাউন সফল করতে হলে সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ গত ১৪ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধসহ ১১ দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। দুদিন পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর একদিন পর খুলে দেওয়া হয় শপিংমলও। তখন সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়তে থাকে। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে দেশে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘প্রয়োজনে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার’।
এরপর গত ৯ এপ্রিল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও একই ইঙ্গিত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।
এসআর/এসকেডি/জেএস