র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। আমরা বলেছিলাম আতঙ্কের তেমন কিছু নেই। আমার দেখা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে এবার সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিচ্ছে। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন নির্বাচন কেন্দ্র পরিদর্শন এবং কেন্দ্রসমূহে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থাদি ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি। 

রোববার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এম খুরশীদ হোসেন বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরলাম। অত্যন্ত সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ঢাকা শহরে কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। র‍্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার মিলিয়ে সমন্বয় করে আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ পর্যন্ত সারা দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন উপলক্ষ্যে ‌‘অনসাইড আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম’ (ওআইভিএস) নামক একটি প্রযুক্তি আপনারা ব্যবহার করছেন। এর কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে জানতে চাইলে র‍্যাব ডিজি বলেন, অবশ্যই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবে। এই ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র তাদেরকে শনাক্ত করছি, যারা বহিরাগত বা যিনি ভোটার না অথচ আসছেন ঝামেলা করার জন্য। সন্ত্রাসী টাইপের লোকজন যারা তাদেরকে আইডেন্টিফাই করার জন্য আইভিএম ডিভাইস ব্যবহার করছি।

নির্বাচন পরবর্তীতে সহিংসতার একটা আশঙ্কা করা হচ্ছে। অতীতেও নির্বাচন পরবর্তী সময় নাশকতার অনেক ঘটনাই ঘটেছে। এই নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে সহিংসতা বা নাশকতা আশঙ্কা রয়েছে কি না? থাকলে প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে আমি বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, বিভিন্ন ডিভিশনে কথা বলেছি। বিভিন্ন স্থান থেকে এই ধরনের প্রশ্ন এসেছে। সহিংসতা বা নাশকতার শঙ্কা, আতঙ্ক, অনেক কিছু এসেছে। এগুলো থাকবেই অতীতে ছিল ভবিষ্যতেও থাকবে।

র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। আজকে নির্বাচন ঘিরেও আতঙ্ক ছিল। অনেক আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল। বিশেষ করে বিরোধী দল বিএনপি জামায়াত নির্বাচন বয়কট করেছে। যারা প্রতিহত করতে চেয়েছে তারা আমাদের যে ব্যবস্থা রয়েছে, যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, কারো নির্বাচন প্রতিহত করার সাহস আছে বলে আমি মনে করি না। 

নির্বাচন পরবর্তী ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা আশঙ্কা করতেই পারি কিন্তু সেই আশঙ্কাকে কীভাবে মোকাবিলা বা প্রতিহত করব, তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন, এমন কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই। কেউ চেষ্টা করলেও সফল হতে পারবে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে পরিমাণ প্রস্তুতি ও জনগণকে আপনারা আশ্বস্ত করেছিলেন সে তুলনায় ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম। ভোটাররা কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সবসময় বলেছি সাধারণ ভোটার যারা তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। এজন্য যা যা নিরাপত্তা ব্যবস্থা দরকার আমরা তা গ্রহণ করেছি। আমরা বারবার বলেছি নির্বাচন নিয়ে কোনো ঝামেলা হবে না। আমরা এটাও বলেছি এবং করে দেখেছি যে প্রতিটা ভোটকেন্দ্রে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। ভোটার ভোটকেন্দ্র ও ভোট গ্রহণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করছি। ভোট গণনার সময় যাতে ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের ঝামেলা না হয় নির্বাচন কর্মকর্তারা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্র থেকে ফেরত আসতে পারেন সে ব্যাপারেও আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

তবে র‍্যাব ডিজি বলেন, ভোটের পারসেন্টেন্স কেমন হবে তা এখনই বলতে পারব না। এই পরিসংখ্যান নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা নির্বাচন কমিশন বলতে পারবে। তবে দিনশেষে পার্সেন্টেজ ভালো হবে বলে আমি মনে করি। 

তিনি বলেন, শীতের দিন, তার মাঝে ছুটি। অনেক ভোটার দুপুর ১২টার পর বের হয়। নরমালি সকালে নারীরা বের হন। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর অনেক ভোটার বের হন। অনেকে কর্মজীবী আছেন, মাঠে-ঘাটে কাজ করেন। দুপুরের পর দেখবেন যে ভোটারের চাপ বেড়ে গেছে বলে আমার ধারণা।

ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা সম্পর্কে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত রয়েছে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু হচ্ছে। তবে নরসিংদীতে একটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে যেখানে অনিয়ম হবে সেটা বন্ধ করে দেয়া হবে। যেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে বা যারাই এই কাজের সংশ্লিষ্ট রয়েছেন আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সেসব কেন্দ্র,বন্ধ হবে কি হবে না সে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করবে। তবে আমরা যে কাজটা করছে আমাদের অ্যাকশন পাশাপাশি যারা এই কাজে ইনভল্ভ হচ্ছে কেউ আনটাচ থাকবে না। আমরা সব নোটডাউন করছি। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সবাইকে আইনের সম্মুখীন হতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। সে যেই হোক না কেন, যে দলেরই প্রার্থী হোক না কেন। বেআইনি কাজ করলে কেউ পার পাবে না, নিশ্চিত থাকতে পারেন।

জেইউ/এমএ