ভোট শুরুর অপেক্ষা
রাত পোহালেই কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ফাইনাল পরীক্ষা অংশ নিতে যাচ্ছে। শঙ্কা ও চ্যালেঞ্জের এই পরীক্ষায় পূর্ণ মার্ক পেতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা চলবে আউয়াল কমিশনের ফাইনাল পরীক্ষা। নির্বাচন কমিশন সংসদ ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি নিলেও ব্যালট পেপার পাঠানো ও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে চ্যালেঞ্জে রয়েছে। তবে কাজী হাবিবুল আউয়ালের দাবি অতীতের ন্যায় এবারও ভোটার উপস্থিতি ভালো হবে।
এদিকে, শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন। ভোটারদের আশ্বস্ত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য মানদণ্ড অনুসারে আমাদের আইন রয়েছে। ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু আমরা যেভাবে বলি, সেভাবে নির্বাচন সবসময় শান্তিপূর্ণ হয় না। আমরা চাই, আমাদের নির্বাচন কেবল দেশীয়ভাবেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। সংসদ নির্বাচনে আট বিভাগের ৬৪ জেলায় ১০১টি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন ভোট উৎসব। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৮টি, বরিশালে ৬টি, চট্টগ্রামে ১৬টি, সিলেটে ৮টি, রাজশাহীতে ২০টি, ময়মনসিংহে ৮টি, খুলনায় ১১টি এবং রংপুরে ১৪টি আসন রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনী আইনানুযায়ী, ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে শেষ করতে হয় প্রচার-প্রচারণা। সেই নিয়ম মেনেই সারা দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণার সমাপ্তি হয়েছে। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় প্রচারণার সময় শেষ হয়েছে। প্রচারণায় কেউ আইন না মানলে ছয় মাসের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। কমিশন চাইলে শুনানি করে কারো প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারে।
এদিকে, জাতীয় সংসদে আসন সংখ্যা ৩০০ থাকলেও এবার ২৯৯ আসনে নির্বাচন হচ্ছে। নওগাঁ-২ আসনের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যু হলে আইন অনুযায়ী আসনটির ভোট স্থগিত করে ইসি। এর ফলে ২৯৯ আসনে ভোটাররা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাবেন।
সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। হাইকোর্ট থেকে ৩ জন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় দলটির প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬ জন। এ ছাড়া, জাতীয় পার্টির ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জনসহ ২৮টি রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থী সংখ্যা এক হাজার ৫৩৪ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৬ জন। নির্বাচনে ৯০ জন নারী প্রার্থী ও ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোটের নিয়ন্ত্রক ৬৬ রিটার্নিং অফিসার
ভোট নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠু করতে চালকের ভূমিকায় রয়েছেন ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরমধ্যে আছেন ৬৪টি জেলার ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুইজন বিভাগীয় কমিশনার। ৪২ হাজারের ভোটকেন্দ্রে রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে পোলিং অফিসার পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক নির্বাচনী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এদের মধ্যে আছেন ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার, ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং ৪২ হাজার ১৪৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি অর্গানোগ্রাম অনুসরণ করা হয়। এতে সবার উপরে থাকে রিটার্নিং অফিসার। রিটার্নিং অফিসারদের তত্ত্বাবধানেই সার্বিক ভোট প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মাঠে যেসব রাজনৈতিক দল
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দল এবারের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে দেশের বড় রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও এ নির্বাচন বয়কট করেছে বিএনপি। দলটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ একাধিক দাবিতে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ ছাড়া, নির্বাচনে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণ ফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পাটি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল) ও গণতন্ত্রী পার্টি প্রার্থী দিয়েছে।
ভোটে নারী প্রার্থী ৯০, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৭৯ জন
এবারের জাতীয় নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সারা দেশে দলীয় প্রতীক ও স্বতন্ত্র থেকে মহিলা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সারা দেশে দলীয় ও স্বতন্ত্র থেকে মোট ৯০ নারী প্রার্থী ভোটে অংশগ্রহণ করছেন। অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসন থেকে ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে লড়াই করবেন। নারী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মিলে মোট ১৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আরও পড়ুন
যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল ও ২৪ ঘণ্টা সর্বসাধারণের জন্য যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সময় কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসনের সদস্য ও অনুমোদিত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবার যানবাহন, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন, দূরপাল্লার যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহাসড়ক, প্রধান আন্তঃজেলা রুট, মহাসড়ক এবং প্রধান মহাসড়কের সংযোগ সড়কের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।
ব্যালট পেপার পরিবহন ও বিতরণে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ
ভোটগ্রহণের দিন সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট থেকে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার সাথে সকাল ৬টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারের নিকট হস্তান্তর করবেন। ভোটগ্রহণের দিন সকালে ব্যালট পেপার পরিবহনের বিষয়ে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র ও দুই লাখ ৬০ হাজার ৮৫৬টি ভোটকক্ষ রয়েছে। ইতোমধ্যেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হচ্ছে নির্বাচনী মালামাল। তবে ব্যালট যাবে ভোট গ্রহণের আগমুহূর্তে।
ভোটে দায়িত্ব পালন করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ লাখ সদস্য
এবারের সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পুলিশের ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৭ জন, আনসার ব্যাটালিয়ন ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন, সশস্ত্র বাহিনীর ৪০ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। ভোটগ্রহণ ঘিরে এমন নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হলেও মাঠ পর্যায়ে উত্তাপ ও সংশয় বিরাজ করছে। এর মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অনেক স্থানে প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ভয় দেখানো, ক্যাম্প ভাঙচুরসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগে আন্তঃনগর ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেসে দেওয়া আগুনে ঝরেছে ৪ তাজা প্রাণ। এছাড়া, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ-আনসারের ১৫ থেকে ১৭ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় পৌনে সাত লাখ সদস্য শুক্রবার মাঠে নেমেছেন। এদিন ৬৫৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও নেমেছেন। তারা নির্বাচনী অপরাধ দেখলে তাৎক্ষণিক সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করবেন।
সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার প্রায় ১২ কোটি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৯৭ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮৯ জন এবং হিজড়া ভোটার ৮৪৮ জন। ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে একজন বৈধ প্রার্থী মারা যাওয়ায় ভোটের মাঝপথে নওগাঁ-২ আসনের ভোট বাতিল করেছে কমিশন।
আরও পড়ুন
দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন দেখার জন্য যে বিদেশিরা আবেদন জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ১৮৬ জন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী। এছাড়া, ২০ হাজার ৭৭৩ জন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এবার ইসি কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জনকে ভোট পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দিয়েছে। যারা কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন, তাদের নামের তালিকা অনুমোদন করে কার্ড দিয়ে থাকে ইসি সচিবালয়।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ব্যয় ২ কোটির বেশি
জাতীয় সংসদ নিবার্চন উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে ২ কোটি ১১ লাখ টাকা চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসির আমন্ত্রিত বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আতিথিয়েতায় এ অর্থ প্রয়োজন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসির আমন্ত্রণে যেসব দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসবে তাদের ব্যয় বহনের জন্য মোট ২ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ অর্থ পর্যবেক্ষকদের হোটেল ব্যয়, বিভিন্ন কেন্দ্রে যাতায়াত এবং আপ্যায়ন, আতিথেয়তা, বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা ও হেল্প ডেস্ক, স্থানীয় হোটেলে মিডিয়া সেন্টার স্থাপন, স্বেচ্ছাসেবক ও নিরাপত্তা প্রভৃতিতে এ অর্থ ব্যয় হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে পর্যবেক্ষকদের এ বাজেট প্রাক্কলনে সুপারিশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংসদ ভোটে মোট ব্যয় প্রায় ২৩শ কোটি টাকা
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যয় শুরুতে দেড় হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও তা বেড়ে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রায় ১২ কোটি ভোটারের এবারের নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানোসহ সার্বিক প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন। ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার, ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রায় ৩ হাজার নির্বাহী হাকিম এবং হাজারো বিচারিক হাকিম নিয়োজিত হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ৯ লাখের মতো জনবল থাকছেন। সেইসঙ্গে প্রায় ৮ লক্ষাধিক আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য মোতায়েন হয়েছে।
৫১ জনের নামে মামলা, সর্বোচ্চ শাস্তি এক লাখ টাকা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় প্রার্থী ও সমর্থকসহ মোট ৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া, ৭৪৬ জনের নামে শোকজ দেয় ইসি। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই প্রার্থীকে মোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন নির্বাচন কমিশন। কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এক লাখ এবং বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তারপরও এবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে প্রার্থীরা।
নির্বাচনে ২২ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন
নির্বাচন উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ২২ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। এই মনিটরিং সেলের নেতৃত্ব দেবেন আইডিএ প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম।
৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা
সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত লাইসেন্সধারীরাও আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন না। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে ঘোষিত তফসিল অনুসরণে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত লাইসেন্সধারীদের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। এই আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র আইন ১৯৭৮’ এর সংশ্লিষ্ট ধারার বিধান অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনী
ভোটের মাঠে গত ৩ জানুয়ারি থেকে দায়িত্ব পালন করছে সশস্ত্র বাহিনী। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮ দিন মাঠে থাকবে তারা। ৩০০ সংসদীয় আসনে আগামী ৩ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগের জন্য আদেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।
আরও পড়ুন
জাতীয় সংসদ ভোট নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে যে উপনির্বাচনগুলো হয়েছে, সেখান থেকে দেখেছি যে কোনোভাবেই ভোট কাস্ট ৪০ শতাংশ হয় না। এবার বিএনপি নির্বাচনে নেই, সেহেতু কোনোক্রমেই ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে না।
ভোটের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এবারই দেখছি, আওয়ামী লীগ সমর্থিত লাঙ্গলের প্রার্থী। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও বলছেন, ‘আমি নৌকার প্রার্থী, বিজয়ী হলে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করব’। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বেশিরভাগই কিন্তু নৌকাবিরোধী নয়, তারা ব্যক্তিবিরোধী। কাজেই এবার দলীয় কোনো লড়াই থাকছে না। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির লড়াই চলছে। জাতীয় পার্টিও আওয়ামী লীগের, বেশির ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীও আওয়ামী লীগের। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। দল বাদ দিয়ে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির লড়াই হলে মারামারি-হানাহানি বাড়ে। এবার সংসদ নির্বাচনেও এমনটা হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যদি দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় তাহলে মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড কম থাকে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ঢাকা পোস্টকে জানান, ‘জাতীয় নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এবার বড় বিরোধী দল (বিএনপি) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। শুধু অংশগ্রহণ না করে বসে থাকেনি তারা। নির্বাচনের বিরোধিতাও করে যাচ্ছে এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া, সকাল বেলা কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানোও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। কারণ, যেদিন নির্বাচন হবে সেদিন প্রচুর শীত থাকবে। শীতের সময় গ্রামের রাস্তাগুলোতে বড় বড় গাছ থাকে। সে কারণে কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে এলাকা। কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় সকাল বেলা নির্বাচনী মালামাল নিয়ে যাওয়া চ্যালেঞ্জ। অনেক এলাকা আছে উপজেলা থেকে ১০ থেকে ২০ মাইল দূরে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ভালোভাবে হিসাব করতে হবে। যেসব কেন্দ্রে সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো যাবেন না সেসব জায়গার ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো। তবে, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় নির্বাচন কমিশন সুবিধা পাবে। পার্বত্য জেলাগুলোতে এবং চরাঞ্চলে মালামাল পাঠানো কষ্ট হবে। আর নির্বাচনের দিন যদি বিরোধী দলের অবরোধ থাকে, তাহলে সহিংসতা হতে পারে। এজন্য এটিও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে আমার কাছে মনে হয়।
ভোটার উপস্থিতির চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সাবেক এ সিইসি বলেন, আগের থেকে এবার ভোটার উপস্থিতি কম হবে। কারণ, বড় একটা রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যাচ্ছে না। তাই তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ভোট দিতে যাবে না। এ হিসেবে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী বেশি। সেক্ষেত্রে তারা ভোটার নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। সব প্রার্থী ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারলে ভোটার উপস্থিতি খারাপও হবে না। আমার হিসাবে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। এবার অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এসআর/পিএইচ