রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে গত ৭ দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা করাতে এসে জীবন শঙ্কায় থাকা শিশু আয়ান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও শিশুর বাবার ভাষ্যমতে, গত এক সপ্তাহে শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি শিশুটির। ‘তবুও সুস্থ হয়ে উঠবে’, এমন আশায় হাল ছাড়ছে না কোনো পক্ষই। বাবা শামীম আহমেদ জানান, প্রতিদিনই আশায় থাকি ডাক্তার হয়ত ভালো খবর শোনাবেন, কিন্তু প্রতিবারই হতাশ হই। প্রতিটা ক্ষণ আশায় থাকি কেউ এসে বলবে আয়ান ‘সুস্থ হয়ে উঠছে’!

শনিবার (৬ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ এবং ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুল হকের সঙ্গে। 

আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বলেন, ‘৬ দিন পেরিয়ে আজ সপ্তম দিন চলছে, আমার আয়ান বেঁচে আছে নাকি নেই কিছুই বুঝতে পারছি না। ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি শুধু শুধুই তাকে ভর্তি রেখে বিল বাণিজ্যের চিন্তা করছে, সেটাও মাথায় আসছে না। আমি এখন কী করব, এভাবে হাসপাতালে কতোদিন দৌড়াদৌড়ি করব?’

তিনি বলেন, ‘যখনই ডাক্তার আসে, তাকে দেখার পর আমাদের সঙ্গে কথা বলে, তখন প্রতিবারই মুখিয়ে থাকি ভালো একটা খবর শোনার অপেক্ষায়। কিন্তু প্রতিবারই হতাশ হই। এই ৬ দিনে বাচ্চার কোনো উন্নতির খবর শুনতে পাইনি। বরং নিজের চোখে আমার সন্তানের যে চিত্র দেখি, তাতে আরও হতাশ হই।’

শামীম আহমেদ বলেন, ‘ডাক্তার বলছে এখনো তার পালস আছে, তবে আমি যেমনটা দেখলাম চোখ অনেকটা ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে, দুটো চোখ অনেকটা ফুলে গেছে। ডাক্তারদের কথায় যেমনটা বুঝলাম, কিছু অর্গান আস্তে আস্তে ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে।’

আশঙ্কার কথা জানিয়ে শিশু আয়ানের বাবা আরও বলেন, ‘আমি তো শুধু খৎনা করানোর জন্য আসছি ছোট্ট একটা টাকার অঙ্ক নিয়ে। এখন এতোদিন রাখার পর বড় একটা বিল ধরিয়ে দেয় কি না এটাই নিয়েই শঙ্কায় আছি। আমার ধারণা ইউনাইটেড হাসপাতাল আমার সন্তানকে নিয়ে ভিন্ন কোনো পরিকল্পনা করছে। সামনে নির্বাচন বা রাজনৈতিক কোনো একটা অস্থিরতার দিনে তাকে হয়ত আমাদের কাছে হেন্ডওভার করবে। অন্তত যেন মিডিয়ার চোখটা এদিকে না আসে।’

শিশু আয়ানের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, ‘শিশুটির অবস্থা আগের মতই আছে। কোনো ধরনের পরিবর্তন আমরা দেখছি না। তার অবস্থা ভালোও বলা যাবে না, আবার খারাপও বলা যাবে না।’

অর্গান ড্যামেজ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ডাক্তারদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, শারীরিক অর্গান ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। ডাক্তাররা যেমনটি জানিয়েছেন, শারীরিক অবস্থা একদম আগের মতোই আছে। ভালোর দিকেও না খারাপের দিকেও না।’

শামীম আহমেদের অভিযোগ ও আশঙ্কা প্রসঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতালের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘হাসপাতাল বিল নিয়ে যদি শিশুর বাবার কিছু বলার থাকে, তাহলে ওনার উচিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা। এটি নিয়ে গণমাধ্যমে অভিযোগ করলে তো কোনো লাভ নেই।’

‘এখন আপনি যদি বলেন, বিল লম্বা করার জন্য তাকে হাসপাতালে রাখা হচ্ছে, এটি নিয়ে কী বলব, এই অবস্থায় এমন ধরনের কোনো কথা এলে যে কারও কাছেই এটি শকড হয়ে যাওয়ার মতো। এই মুহূর্তে আমাদের সবারই কনসেনট্রেশন হচ্ছে শিশুটিকে কীভাবে বাঁচিয়ে আনা যায়, সুস্থ করা যায়। আমরা এই মুহূর্তে এর বাইরে কোনো কিছুই ভাবছি না’, যুক্ত করেন আরিফুল হক।

জানা গেছে, শিশু আয়ান ঢাকার পূর্বাচলের জলসিঁড়ি ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের নার্সারির ছাত্র। গত ৩১ ডিসেম্বর বাড্ডা মাদানী অ্যাভিনিউয়ের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন শিশু আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ। সেখানে তাকে অস্ত্রোপচার পূর্ববর্তী এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়। স্বজনদের অভিযোগ, এনেসথেসিয়া প্রয়োগের ভুলের কারণে শিশু আয়ানের জীবন এখন সংকটাপন্ন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিশুটিকে এনেসথেসিয়া প্রয়োগ করেন ডা. সাব্বির আহমেদ। আর সার্জারি করেছেন ডা. মেহজাবীন। পরিবারের অভিযোগ, বাচ্চাটিকে প্রথমে এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়। এরপর সেখানে ওই অবস্থায় তাকে দিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ২ ঘণ্টা ক্লাস নেওয়া হয়। শেষের দিকে যখন তারা বাচ্চার পালস পাচ্ছিল না, তখন ডাক্তাররা আয়ানের বুকে বার বার চাপ দিচ্ছিল। তখনই আমরা বুঝতে পারি, কিছু একটা ভুল হয়েছে।

টিআই/জেডএস