দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সহযোগিতায় মাঠে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তা নিশ্চিতে এরমধ্যেই ‘অনসাইড আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ওআইভিএস)’ নামে একটি বিশেষ ডিভাইস নিয়ে মাঠে নেমেছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। 

শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টহল বৃদ্ধি ও চেকপোস্ট স্থাপন করেছে পুলিশের এ এলিট ফোর্স। চেকপোস্টে সন্দেহভাজনদের ডেকে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে—অপরাধী কিনা।

এদিন সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর মিরপুর-২ এ মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে চেকপোস্ট স্থাপন করে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অনেককে ওআইভিএস প্রযুক্তি ব্যবহারে পরিচয় ও অপরাধের ডাটা খুঁজতে দেখা যায় র‌্যাব সদস্যদের।

চেকপোস্টে উপস্থিত র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ওআইভিএস ডিভাইসের মাধ্যমে আঙুলের ছাপেই বেরিয়ে আসবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের নাম-ঠিকানা। এ ছাড়াও ওআইভিএসে আঙুলের ছাপেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে দীর্ঘদিন ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থাকা অপরাধীদেরও। ইতোমধ্যে এ ডিভাইসের মাধ্যমে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড ও অপরাধীদের শনাক্ত করেছে র‌্যাব। 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে কেন্দ্রের সামনে ওআইভিএস নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব। বর্তমানে ১৫টি ব্যাটালিয়নের কমান্ডাররা এ ডিভাইস ব্যবহার করছেন। ভোটকেন্দ্রের সামনে সন্দেহভাজনরা ঘোরাঘুরি করলেই তাদের আঙুলের ছাপ নেবে র‌্যাব।

তিনি জানান, ২০২১ সালে র‌্যাব ফোর্সেস প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও ডাটাবেজের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করে ওআইভিএস। বিশেষ এ ডিভাইসের মাধ্যমে জাল ভোট দিতে আসা ব্যক্তিরাও শনাক্ত হবে। 

তিনি বলেন, এ ডিভাইস চালুর পর হত্যা মামলার আসামি, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীসহ গুরুতর অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব।

কমান্ডার আল মঈন বলেন, ওআইভিএস যন্ত্রটির ব্যবহার শুরুর পর থেকে তাৎক্ষণিক যেকোনো ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। মোবাইলসদৃশ ডিভাইসটি ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে পরিচালনা করা যায়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ও অপরাধী শনাক্তের ক্ষেত্রেও ডিভাইসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ডিভাইসটির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক জাতীয় পরিচয়পত্র, অপরাধীদের ডাটাবেজ ও কারাভোগের ডাটাবেজের তথ্য পাওয়া যায়। 

তিনি বলেন, এতে কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ বা ফিঙার প্রিন্টে ওই ব্যক্তির তথ্য সহজেই তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়। এতে নিমিষেই জানা সম্ভব হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার কিংবা হত্যাকাণ্ডে জড়িত বা অপরাধমূলক যেকোনো কাজের সঙ্গে ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা। 

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ওআইভিএসের মাধ্যমে শুধু অপরাধী শনাক্তই নয়, বিভিন্ন অজ্ঞাতপরিচয় মৃত ব্যক্তি ও মানসিক প্রতিবন্ধীর পরিচয়ও শনাক্ত করা হচ্ছে এবং তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে অপরাধ তদন্তে আরও গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনে সারা দেশের নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। 

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচনের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে র‌্যাব গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রতিটি সংসদীয় আসনে মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়াও স্থাপন করা হয়েছে ৩০টির বেশি অস্থায়ী ক্যাম্প। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদে সুরক্ষা দিতে র‌্যাব পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতা প্রতিরোধে দেশব্যাপী মোট ৭০০টির অধিক টহল দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে।

তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন নির্বাচন কেন্দ্র পরিদর্শন এবং নির্বাচন কেন্দ্রে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও র‍্যাব কর্তৃক গৃহীত সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাদি পরিদর্শনে আসছেন র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন। মিরপুর-২ মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভোট সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি।

জেইউ/এমএসএ