গত কয়েক বছর ধরেই শীতকালে রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও গ্যাস সংকটের কারণে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের চাপ কম, কোথাও সারাদিন চুলা জ্বলে মিটমিট করে, আবার কোথাও জ্বলছেই না চুলা। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারীরা।

গ্যাস সরবরাহ কম থাকার কারণে নিয়মিত গ্যাসের চাপ কম থাকছে রাজধানীর বনশ্রী, বাসাবো, খিলগাঁও, মানিকনগর, মান্ডা, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, জুরাইন, কামরাঙ্গীচর, মহাখালী, পল্লবী, কাফরুল, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১০, রায়েরবাগ, ভূতের গলি, গ্রিনরোড, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, মগবাজার, বাসাবো, আরামবাগ, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা ও মুগদাসহ উত্তরার বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় গ্যাসের সংকট চলছে প্রতিদিনই। এছাড়া, যেসব এলাকায় গ্যাস রয়েছে, সেখানেও স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহরের বাসিন্দারা।

জানা গেছে, প্রতিদিন দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। সেখানে এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে অনেক কম পরিমাণে গ্যাস। ফলে প্রতিদিন ঘাটতি  থেকে যাচ্ছে অনেক। 

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তিতাস গ্যাসের আবাসিক সংযোগ সংখ্যা প্রায় ২৮ লাখ ৫৮ হাজার। এছাড়া, বাণিজ্যিক সংযোগ প্রায় ১২ হাজারের মতো। যার মধ্যে প্রায় ১৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সেখানেও সরবরাহ হচ্ছে, ফলে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। যে কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন গ্যাস সংকট দেখা যাচ্ছে।

রাজধানীর বাসাবো এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বলেন, প্রতিদিন ভোরের দিকে গ্যাস চলে যায়, আর ফিরে আসে বিকেল ৩টার পর। শীত আসার পর থেকে ঠিকমতো দিনের বেলায় রান্না হয় না, যা রান্না করার রান্না করতে হয় রাতে, সেগুলোই আমরা সারাদিনে খাই। ভাত-তরকারি গরম করার গ্যাসও থাকে না বলতে গেলে। যে কারণে গরম করার কাজ আমরা এখন ওভেনে করছি। তাতে বিদ্যুৎ বিলও আসছে অনেক। প্রতি বছর শীত এলেই আমাদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় একটি মেসে থাকেন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের মেসে আগে সকালে বুয়া এসে সবার জন্য রান্না করতেন। কিন্তু শীতকাল আসার পর এখন সকালে আর গ্যাসের চাপ থাকে না, সে কারণে বুয়া রান্না করতে পারেন না। তাই কয়েকদিন ধরে বাইরের হোটেলে খেতে হচ্ছে। এখন বুয়া আসছে সন্ধ্যায়, তখনই মূলত আমাদের রান্না হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের এলাকার প্রায় বাসাতেই এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। 

বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা ইসরাত জাহান নামের একজন গৃহিণী বলেন, সারাদিন গ্যাস থাকে, কিন্তু গ্যাসের চাপ থাকে না, চুলা জ্বলে মিটমিট করে... যা দিয়ে রান্না করা যায় না। ভোরে গ্যাস সরবরাহ ঠিক থাকে, কিন্তু এরপর থেকেই গ্যাসের সরবরাহ কম থাকে। ফলে হালকা হালকা করে আগুন জ্বলে। পরে আবার বিকেল ৩টার পর থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ ঠিক হয়ে যায়, তখন ভালোভাবে চুলা জ্বলে। তাই আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষের এখন রান্না-বান্না করার সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। তারা উপায় না পেয়ে রাতে রান্না করে রাখছে।

তিনি বলেন, অনেকে এই সমস্যার কারণে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে নিয়েছে। প্রতি বছর শীত এলে আমাদের এলাকায় এই সমস্যায় পড়তে হয়। তবে এ জন্য তো গ্যাস কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে বিল কম নেয় না, মাস শেষে ঠিকই বিল দিতে হয়। আমরা অনেকবার কল করে এই সমস্যার কথা জানিয়েছি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, শীতের সময় তাপমাত্রা কমে গেলে অতিরিক্ত গ্যাস প্রয়োজন হয়। যে কারণে এ সময় এসে গ্যাসের সংকট বেশি দেখা দেয়। পাশাপাশি শীতের সময় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা কঠিন, সে কারণে অনেক সময় পাইপলাইনের শেষ অংশের গ্রাহকরা গ্যাস পায় না। এমনিতেই গ্যাস সংকট... পাশাপাশি শীতের কারণে এই সমস্যা তীব্র হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) সেলিম মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্যাসের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম আছে। সাধারণত শীতে গ্যাসের চাহিদা বেশিই থাকে। এলএনজির একটা টার্মিনাল বন্ধ থাকায় সরবরাহ কমে গিয়েছিল। তবে আমরা তা বাড়ানোর চেষ্টায় কাজ করছি। আশা করছি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এএসএস/কেএ