সামান্য অপরাধেও দোষীকে ক্ষমা করা যাবে না : ইসি রাশেদা
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও আশা রয়েছে। সেজন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সামান্যতম অপরাধও যারা করবে তাদের প্রতি আপনারা (জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) ক্ষমাশীল হবেন না। কখনোই কর্তব্যের প্রতি অবহেলা করবেন না। সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করবেন।
সোমবার (১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচনী আইন ও বিধি সংক্রান্ত দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ইসি রাশেদা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একেবারেই দোরগোড়ায়। এ নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে করার জন্য আমাদের এ বিশাল আয়োজন। এতদিন বাইরে থেকে বুঝতে পারিনি নির্বাচন কমিশনের কর্মযজ্ঞ কতটা বিরাট। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে আসার পর দেখতে পেয়েছি নির্বাচনের আয়োজন অত্যন্ত দীর্ঘপ্রক্রিয়ার এবং মহাযজ্ঞ। আমাদের যে জনবল রয়েছে তাদের দ্বারা এ নির্বাচনের বিরাট মহাযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। যার কারণে ধাপে ধাপে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের যুক্ত করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৪৩ হাজার কেন্দ্রে একদিনে একযোগে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে অনেক লোকের প্রয়োজন। সেজন্য নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও সুন্দর পরিবেশে করার জন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, এখানে কেউ যদি একটু সামান্য ব্যত্যয় করি তাহলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে না। কমিশনে আসার পর থেকে আমরা সবসময় মনে করেছি আমাদের একটি ভালো ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। যেখানে ভোটাররা আসবেন এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আমরা সে উদ্দেশ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন
ইসি রাশেদা আরও বলেন, কমিশনে আসার পর থেকে স্থানীয়সহ বিভিন্ন নির্বাচন মিলিয়ে বারোশ’র বেশি নির্বাচন সম্পন্ন করেছি। ছোট দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোন সহিংসতা ও রক্তপাত ঘটেনি। আমি দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে চাই, এ ইলেকশনগুলো আমরা ভালোভাবে করতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে সবার আন্তরিকতার কারণে।
তিনি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আমরা অত্যাধিক গুরুত্বের সাথে নিচ্ছি। কেননা এটি শুধু সাধারণ নির্বাচন নয় বরং গণতন্ত্রের বিষয়টি জড়িত। কারণ জনগণের দেশ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই পরিচালিত হবে এটি আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় মূল মন্ত্র। এখানে জনগণ যাকে নির্বাচন করবে তারাই জনগণের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের অংশগ্রহণ একটি জরুরি বিষয়।
আমরা চাই বা না চাই এখানে অনেক ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে। এসব কাজ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন স্তরে যাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছে তারা তো বটেই আমি মনে করি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা পাঁচ দিন গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনাদের উপস্থিতি, সহযোগিতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে নির্বাচনকে অনেক বেশি সফল করতে পারবেন। যখন দেশে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন মানুষ দাবি তুলে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক। কারণ বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের অন্যরকম একটি আশা আছে। এ সমস্ত বিষয়ে বিবেচনা করেই আমরা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ভোটের মাঠে সংযুক্ত করেছি।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের সেই আশার প্রতিফলন ঘটাবেন সেটি প্রত্যাশা করছি। কোথাও কোনো ক্ষেত্রে সামান্যতম অলসতা, উদাসীনতা বা কোনোরকম অসততা ও নিরপেক্ষতাহীন কাজ করবেন না। আপনারা অনেক সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। কারণ আপনি একজন বিচারক। সমস্ত সাপোর্ট আপনার সাথে থাকবে। কমিশন আপনাকে সহযোগিতা করবে। তাছাড়া অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে যারা অপরাধ করে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের সচেতনতা আসবে না। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিচার করবেন।
তিনি বলেন, আপনারা মাঠে থাকবেন। কোথাও কোন জায়গায় বসে থাকবেন না। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় থাকবেন। আমাদের প্রত্যাশা আমরা যেন কখনো শুনতে না পাই বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটরা থাকার পরও সেখানে অন্যায় হয়েছে বা সমন্বয় হয়নি।
আমরা চাচ্ছি এবারের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হোক। এখানে ভোটাররা আসবে তাদের অত্যন্ত মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য। এ ব্যাপারে আমরা আপনাদের কাছ থেকে আন্তরিক সহযোগিতা চাই।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.), নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।
আরএইচটি/পিএইচ