নতুন আশায় নতুন স্বপ্নে স্বাগত ২০২৪
নিশি অবসান, ওই পুরাতন বর্ষ হয় গত! মহাকালের অমোঘ নিয়মে ইতিহাসের পাতা থেকে বিদায় নিল আরেকটি বছর। শুরু হল ইংরেজি নতুন বর্ষ ২০২৪ সালের প্রথম দিন। ঝরা পল্লবের মতো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ইতোমধ্যে খসে পড়ছে ২০২৩। ফেলে আসা বছরটি এখন ‘পুরোনো সেই দিনের কথা’। নববর্ষকে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে ফুরালো গত বছরের সব লেনদেন। বিদায় ২০২৩। আরও একটি বছর মহাকালের গর্ভে আশ্রয় নিল। দুঃখ-বেদনা ভুলে নতুন আশায় স্বাগত ২০২৪ সালকে।
অসীমের পানে মহাকালের যে যাত্রা, সেখানে সূচিত হলো আরেকটি মাইলফলক। এই যে মহাকালের যাত্রা, সেখানে একেকটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা ও প্রেরণা নিয়ে। আমরা মুছে ফেলি গত হয়ে যাওয়া বছরের গ্লানি, উৎসাহ খুঁজে পাই সুখকর ঘটনাগুলো থেকে, এরপর এগিয়ে যাই অগ্রগতির দিকে। প্রতিবারই নতুন বছরের প্রথম দিনে সবাই বিগত বছরের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি, সাফল্য ব্যর্থতার হিসেব মেলাতে চেষ্টা করে, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে অগ্রগতির পথে ধাবিত হওয়ার জন্য এটা অপরিহার্য।
বিজ্ঞাপন
যেদিন গেছে, তা হোক সফলতার কিংবা ব্যর্থতার। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনগুলো আলোকিত হবে নির্ভুলভাবে। ‘আমার যাবার সময় হলো, দাও বিদায়। মোছ আঁখি, দুয়ার খোলো, দাও বিদায়’……….. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ গানের সুর ধরেই যেন বিদায়ের বার্তা নিয়ে নতুনের আবাহনে বিলীন ২০২৩। নতুন আলোর প্রত্যয়ে স্বাগত ২০২৪।
আরও পড়ুন
পৃথিবীর নানা প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে যাত্রা শুরু করে নববর্ষ-২০২৪। পুরোনো বছর পেছনে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার ঊষালগ্নে জমকালো আয়োজনে মেতে ওঠে বিভিন্ন দেশ, দেশের মানুষ, যা ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ নামে পরিচিত। থার্টি ফার্স্ট নাইটের ছোঁয়া পৃথিবীর নানান দেশের মতো আমাদের লেগেছে সমানভাবে।
বিদায়ী বছর ২০২৩ সালের সকল দুঃখ বেদনা ভুলে গিয়ে এবং নতুন বছরের নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দীপনা নিয়ে বিশ্ববাসীর সঙ্গে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আজ মধ্যরাতে পালিত হচ্ছে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’। যা গভীর আগ্রহের স্থানে ছিল এই ক্ষণ, সবাই মিলে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছে। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ, বিশেষ করে যুব সমাজ মধ্যরাতে ১২ টা ১ মিনিট বাজার সঙ্গে সঙ্গে নববর্ষের বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপনে মেতে উঠছে।
এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বার্তায় ইংরেজি নববর্ষ ২০২৪ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ ছাড়া, ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশের মানুষ ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য বার্তা পাঠানো মাধ্যমে তাদের প্রিয়জন ও বন্ধু-বান্ধবদের শুভকামনা জানাচ্ছেন।
এ ছাড়া, নতুন বছরের শুরুতে আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নববর্ষ উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দেশের মানুষকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য নানাভাবে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করছেন।
ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই, ঘুরছে তার নিয়মে। যার প্রতিটি সেকেন্ডের সঙ্গে মিশে আছে মানবসভ্যতার নানা ঘটনা, নানা ইতিহাস। সেসব ঘটনায় মানুষ স্মৃতিকাতর হয়, আবেগে আপ্লুত কিংবা আনন্দে উদ্বেলিত হয়। জাতীয় জীবনে ২০২৩ বিদায়ী বছরটি নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০২৩ ছিল ঘটনাবহুল। চ্যালেঞ্জ এসেছে, নানান ঘটনাও ঘটেছে। রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় বছর শেষে জাতীয় নির্বাচনের রথে শাসক দল আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও সমমনা জোটের ছিল হরতাল-অবরোধ। বিদায়ী বছরে ছিল কূটনীতিকদের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ। জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কিছু দেশ নিজের আগ্রহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে।
বিদায়ী ২০২৩ সালে চালু হয়েছে পদ্মা রেল সংযোগ, কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ, আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ রেলপথ, খুলনা-মোংলা রেলপথ, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল। ২০২৩ সালের আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব। এ ছাড়া, বিদায়ী বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও ছিল আলোচনায়।
যদিও বিদায় মানেই আনন্দ-বেদনার মহাকাব্য। বিদায়ের দিনে চোখের দৃশ্যপটে একটি বছর যেন এক মুহূর্ত। আজ ভোরের সূর্য আগামীর নতুন পৃথিবী। গেল বছর ঘটে গেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানান ঘটনা। তবুও জীবন যাচ্ছে চলে জীবনের গতিতে। এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ, নতুন আশায়, নতুন স্বপ্নের প্রত্যয়ে।
যেভাবে এলো ইংরেজি নববর্ষ
বিশ্বব্যাপী পালিত নানা জাতিগোষ্ঠীর উৎসবগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন হিসেবে মনে করা হয় বর্ষবরণ উৎসবকে। তাই বর্ষবরণের এই প্রাচীনতা ঐতিহ্যের ধারক। পৃথিবীর সব দেশ ও জাতির মধ্যেই নববর্ষ পালনের রীতি বিদ্যমান। আন্তর্জাতিকভাবে খ্রিষ্টীয় বা ইংরেজি নববর্ষ পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। এভাবেই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে আবারও চলে এলো নতুন একটি বছর। থার্টি ফার্স্ট নাইট বা ইংরেজি নববর্ষের প্রথম প্রহরে উৎসব উদযাপনে মেতেছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু এই ইংরেজি নববর্ষ এলো কীভাবে?
জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন বছর আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে ইংরেজি নতুন বছর উদ্যাপনের ধারণাটি আসে, তখন মেসোপটেমিয় সভ্যতার (বর্তমান ইরাক) লোকেরা নতুন বছর উদ্যাপন শুরু করে। তারা তাদের নিজস্ব গণনা বছরের প্রথম দিন নববর্ষ উদ্যাপন করত।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ সালে রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয়। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি করা হয়।
এগুলো যিশুর জন্মের আগের কথা। তবে যিশু খ্রিষ্টের জন্মের পর তার জন্মের বছর গণনা করে ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি ক্যালেন্ডারের নতুন সংস্কার করেন। যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কার্যত দিনপঞ্জি হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বছর পালন শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে ‘নিউ ইয়ার ইভ’। এদিন নতুন বছরের আগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।
যদিও ইংরেজি নতুন বর্ষ পালনে ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন- ইসরায়েল দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। আবার কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণই করেনি। এদের মধ্যে আছে ইরান, ইথিওপিয়া, আফগানিস্তান সৌদি আরব, নেপাল। এসব দেশও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না।
এএসএস/এমজে