রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘গরিব লোকেরা দেশে বেশি পয়সা পাঠায়, একটু শিক্ষিতরা কম’
দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ নিয়ে আক্ষেপ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, গরিব লোকেরাই (শ্রমিক) দেশে বেশি পয়সা (রেমিট্যান্স) পাঠায়। যারা একটু শিক্ষিত তারা টাকা-পয়সা কম পাঠান।
শনিবার (৩০) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া বক্তব্যে এমন আক্ষেপ করেন মন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের লোকেরা তাদের পরিবারের জন্য দেশে টাকা পাঠায়। সেই সুযোগে সরকার রেমিট্যান্স পায়। তবে রেমিট্যান্স খুব বেশি না। রেমিট্যান্সে পাঠানোর দিক দিয়ে আমরা সপ্তম। আমাদের চেয়ে অনেক অল্প সংখ্যক লোকের দেশ ফিলিপিন কিংবা মেক্সিকো অনেক রেমিট্যান্স পাঠায়, ভারত রেমিট্যান্সে সর্বোচ্চ। রেমিট্যান্সে আমরা অনেক কম। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, আমাদের যেসব প্রবাসী যাচ্ছেন তাদের বিরাট সংখ্যক দক্ষতা সম্পন্ন নয়।
‘মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের মাত্র দেড় পার্সেন্ট প্রবাসী আছেন যারা দক্ষ। কিন্তু এই গরিব লোকেরাই বেশি পয়সা পাঠায়। যারা একটু শিক্ষিত, তারা টাকা-পয়সা কম পাঠান।’ বক্তব্যে যোগ করেন মন্ত্রী।
প্রবাসীদের সেবা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উঠে আসা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন মোমেন। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রায়ই অভিযোগ করা হয় পাসপোর্ট দিতে দেরি করছে, অভিযোগ করা যায় এনআইডি তারা পান না। অভিযোগ করা হয় বিদেশে অনেক প্রবাসী গিয়ে চাকরি নাই। মধ্যপ্রাচ্য থেকে চাকরির অভাবে ৩৫ পার্সেন্ট ফিরে আসে। কিন্তু এগুলোতে সব দায়দায়িত্ব দেওয়া হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
তিনি বলেন, পাসপোর্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইস্যু করে না। পররাষ্ট্র শুধু তথ্য বায়োমেট্রিক ডাটা সংগ্রহ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়। তারা (স্বরাষ্ট্র) যাচাই-বাছাই করে পাসপোর্ট তৈরি করেন। যখন তারা (স্বরাষ্ট্র) তৈরি করেন পররাষ্ট্র সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিতরণ করেন। কিন্তু বাজারে কথা আছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট দিতে দেরি করে।
কর্মীদের বিদেশ গিয়ে চাকরি না পাওয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিদেশে গিয়ে অনেক চাকরি পান না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাকরি জোগাড় করেন না। বিএমইটি (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানাত—এ রকম একটা কোম্পানি থেকে চাহিদা এসেছে ওদের যাচাই-বাছাই করা দরকার। সম্প্রতি এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খবরই দেন না তারা। তারপর আমরা জানি না, এটা ভুয়া কোম্পানি না কি, তার কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে সবাই সজাগ হতে হবে।
প্রবাসে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি দেশের বিরুদ্ধে বানোয়াট তথ্য প্রচার করে বলে অভিযোগ করেন মোমেন। তিনি বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকায় দেশের উন্নয়ন হয়েছে। যে সমস্ত দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নাই সে সমস্ত দেশ বড় কষ্টে আছে। প্রবাসীরা অনেক সময় বানোয়াট তথ্য প্রচার করেন। আগামীতে তারা সেগুলো থেকে বের হয়ে দেশে যে ভালো ভালো কাজ হচ্ছে সেটা প্রকাশ করবেন। দেশের জন্য ভালো ভালো কাজ করবেন। যেন দেশে অশান্তি না হয়, যেন স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। দেশে অস্থিতিশীলতা থাকলে সবাইকে ভুগতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও প্রবাসী কল্যাণ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বক্তব্য রাখেন।
এনআই/এসএম