পুলিশের কাছে সব প্রার্থীই সমান বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের কাছে সব প্রার্থী সমান। প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে সব প্রার্থী যেন সমান সুযোগ পান, সেটা নির্দেশনা দেওয়া আছে।

নির্বাচনকালীন সারা দেশে ১ লাখ ৮৯ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত থাকছেন। নির্বাচনের দায়িত্বে, মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম, ম্যাজিস্ট্রের সঙ্গেও ডিউটিতে থাকেন। এমনকি ওইদিন যিনি থানার সিসি লেখেন, উনিও নির্বাচনী দায়িত্বে।

তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলমান রয়েছে। কোথাও এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মামলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।

আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনময় পরিস্থিতি রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনের আদেশ অনুযায়ী পুলিশ কর্মাকর্তাদের বদলি এবং কাউকে কাউকে প্রত্যাহারও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে নাশকতার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে।  পুলিশের কাছে সব প্রার্থী সমান। প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে সব প্রার্থী যেন সমান সুযোগ পান, সেটা নির্দেশনা দেওয়া আছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ রেলে আগুনসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। রেল পুলিশের মাধ্যমে রেলের নিরাপত্তায় বিভিন্ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইপি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা রাজনৈতিক কারণে নয়, রাজনীতি করা অপরাধ নয়। তবে কেউ যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যানবাহনে আগুন দেওয়া, ভাঙচুর করা, যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তাহলে নির্দিষ্ট মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাদের কারও কারও হয়তো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে। সেটা না দেখে নাশকতায় সম্পৃক্ত কি-না সেটা বিবেচনায় নিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীপক্ষের ২৬ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই তথ্য সঠিক কি-না? জানতে চাইলে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, পরোয়ানা তামিলসহ বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগে সারা দেশে গড়ে ১ হাজার ৬০০ জনের মতো গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের পদধারি সংখ্যা কত সেটা আমাদের কাছে হিসাব নেই। সারাদেশ থেকে তথ্য নিয়ে সে হিসাব তৈরির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কেউ ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত হলে পুলিশ শুধু তাদেরই গ্রেপ্তার করছে।

নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণেও বাধা দেওয়া হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবে কি না বা ভোট দেওয়া, না দেওয়ার অধিকার ভোটারের আছে। কিন্তু ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অধিকার কারও নেই। 

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। কোনো কোনো দুর্গম এলাকার কেন্দ্রও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সেগুলোর বিষয়েও পুলিশ বাড়তি ফোর্স দিয়ে কাজ করছে। পুলিশ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকায় বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করে হুমিক দেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এই ডিআইজি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে আমাদের বিশেষ অভিযান চলমান। বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও বহন নিষিদ্ধ করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। নির্বাচনকালে কেউ বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন বা বহন করতে পারবে না। আমাদের কাছে নির্দিষ্ট এলাকায় বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের দুটি অভিযোগ এসেছে। আমরা তদন্ত করে দেখেছি সেগুলো ছিল খেলনা অস্ত্র। 

নির্বাচন কেন্দ্রিক মারামারি ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেকোনো ঘটনার পরই মামলা হচ্ছে। পুলিশ ওইসব ঘটনায় দায়ি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছে না। পুলিশ পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষভাব দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশের কোনো কর্মকর্তা নিরপেক্ষতা হারানোর অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বদলি বা প্রত্যাহার করছে। এরপরও ওই কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা হারানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো অভিযোগ পেলে সেগুলোর প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পুলিশ তাদের সহযোগিতা করছে। কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসাররা যেভাবে নিরাপত্তা নির্দেশনা দেবেন পুলিশ সেভাবে কাজ করবে। 

ডিআইজি অপারেশন আরও বলেন, নির্বাচনের সময়ে সারা দেশে ১ লাখ ৮৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকছেন। নির্বাচনের দায়িত্বে, মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম, ম্যাজিস্ট্রের সঙ্গেও ডিউটিতে থাকবে পুলিশ সদস্য। এমনকি ওইদিন যিনি থানার সিসি লেখেন, তিনিও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন।

দাগি-আসামি ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা জামিনে বেরিয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, কোনো আসামি জামিনে বেরিয়ে এলে সে নতুন করে অপরাধে না জড়ালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ নেই। জামিন পাওয়া আসামিদের বিষয়ে পুলিশের বিশেষ নজরদারি অব্যাহত আছে। তারা কোনো অপরাধ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে থার্টি ফার্স্টের নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, থার্টি ফার্স্টের নিরাপত্তার বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। আইজিপিও বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ফুটানো ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উন্মুক্তস্থানে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। এছাড়া গুলশান, বনানী ও ৩০০ ফিটসহ বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

এমএসি/এসএম