ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মুকিত হোসাইন ওরফে ‘বোমা মাওলানা’কে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার ‘বোমা মাওলানা’ মোট ৪০০টি বোমা তৈরি করে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। 

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবির লালবাগ বিভাগ।

ডিবি জানায়, এই ‘বোমা মাওলানা’ গান পাউডার সংগ্রহ করে প্রায় ৪০০টি বোমা তৈরি করেন। পরে এসব বোমা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন। তার সরবরাহ করা বোমার মধ্যে একটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। 

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে মুকিত হোসাইন ওরফে ‘বোমা মাওলানা’র খোঁজ করছিলাম। তার নাম মুকিত। তবে সবাই তাকে ডাকে ‘বোমা মাওলানা’ নামে। একসময় সে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও সভাপতি ছিল। পরবর্তী সময়ে সে ছাত্রদল মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। ২০১৩-১৪ সালে বোমা বানাতে গিয়ে তার ডান হাতের কব্জি উড়ে যায়। এরপর থেকে তার নাম হয় ‘বোমা মাওলানা’। দলীয় আনুগত্য ও উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে তাকে মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত করেন স্বয়ং তারেক জিয়া।

মহানগর জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে যে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়েছিল সেটির মূল পরিকল্পনাকারী ছিল ‘বোমা মাওলানা’। গত ২৭ অক্টোবর রাতে মতিঝিল ব্যাংক কলোনিতে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পাঠানো ১০ কেজি পরিমাণ গান পাউডার রিসিভ করেন ‘বোমা মাওলানা’। তার কাছে এ গান পাউডার পৌঁছে দেন ভাটারা থানার যুবদলের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম নয়ন।

এই গান পাউডার দিয়ে কয়েক দফায় প্রায় ৪০০টি হাত বোমা তৈরি করে ‘বোমা মাওলানা’। পরে সে বিভিন্ন থানা যুবদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের কাছে এসব বোমা সরবরাহ করেছে। তার সরবরাহ করা হাত বোমার মধ্য থেকে একটি যুবদলের সদস্য সোহেল খান ও অভি আজাদ চৌধুরীর নির্দেশে ঢাকা মহানগর জজ কোট আদালতে বিস্ফোরণ ঘটায় ওয়ারীর আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী হাফসা আক্তার।

জিজ্ঞাসাবাদে ‘বোমা মাওলানা’ জানায়, প্রতিটি যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য আগুনদাতাদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এছাড়া  বিস্ফোরণ ঘটানো ও মশাল মিছিলের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় মহানগর যুবদলের পক্ষ থেকে। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রায় ৬-৭ হাজার লোকের মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিল ‘বোমা মাওলানা’।

হারুন অর রশীদ বলেন, নাশকতার জন্য যারা বোমা বানায় এবং বাস ও ট্রেনে যারা নাশকতা করে তাদের অনেকের নাম পেয়েছি। গত ২৭ অক্টোবর এই ‘বোমা মাওলানা’ একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আর সেখানে বসে তিনি পরিকল্পনা করছিলেন কোথায় থেকে বোমা বানানোর সরঞ্জাম সংগ্রহ করা যায়, আর কাকে দিয়ে এসব বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কাকে পঙ্গু করা যায়।

তিনি বলেন, লন্ডন থেকে আসা নির্দেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক/ভীতি ছড়ানোর কাজে ঢাকা মহানগর যুবদল দক্ষিণের আটটি টিম গঠন করা হয়। ‘বোমা মাওলানা’র দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় যুবদল ও মহানগর যুবদলের সাথে সমন্বয় করা। সমন্বয় করে বোমা বানিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো। এছাড়া সে ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ের যুবদলের কর্মীদের দিয়ে যানবাহনে আগুন দেওয়ার কমপক্ষে ৬টি ঘটনার সমন্বয় করেছে। আমরা তার কাছ থেকে এমন অনেক তথ্য পেয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ‘বোমা মাওলানা’ যুবদলের কর্মীদের শিখিয়ে দিত কীভাবে আগুন লাগাতে হবে। আর তাদের সে বলত যে, তার বলা কায়দায় যদি আগুন লাগানো হয়... আর সেই ছবি যদি লন্ডনে পাঠানো হয়, তাহলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।

যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিবি প্রধান বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

এমএসি/কেএ