কুমিল্লায় একাত্তর টিভির দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে সুপারিশ করেছে অনুসন্ধান কমিটি। এর আগে, এমপি বাহার ক্রমাগত আচরণ বিধি ভঙ্গ করায় তার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয় ইসি।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ইসিতে এ তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও কুমিল্লার যুগ্ম জেলা জজ মো. সিরাজ উদ্দিন ইকবাল। 

প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি জানায়, গত ১৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার এলাকায় একটি উঠান বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে তিনি বলেন, যদি কোনো বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া যায় তার হাত ও ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবেন। পরে ‘আমি আ.ক.ম বাহাউদ্দিন আপনাদের সাথে আছি’— মর্মে উসকানিমূলক নির্দেশনা সম্বলিত বক্তব্য নিয়ে একাত্তর টেলিভিশনে ভিডিও ফুটেজসহ সংবাদ প্রচারিত হলে তা অনুসন্ধান কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়। 

পরবর্তী সময়ে ওই বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক কুমিল্লা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও ফুটেজ অনুসন্ধান কমিটির কাঠেছ পাঠান। নৌকা মার্কার প্রার্থীর এই বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হয়েছে মর্মে অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রতীয়মান হওয়ায় কমিটি তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে নৌকা মার্কার প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাহারকে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যাখ্যা দাখিল করেন। লিখিত ব্যাখ্যায় তিনি তার বক্তব্যকে খণ্ডিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন। এছাড়া, নির্বাচন বানচালের চেষ্টায় লিপ্তদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি করেন। 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা ও অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাহারের সমর্থনে নির্বাচনী এলাকায় একাধিক উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

অনুসন্ধান কমিটি জানায়, একটি বৈঠকে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো বিএনপি ও জামায়াতের কোনো কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া যায়, তাহলে আপনারা তার হাত ও ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবেন। আমি আ.ক.ম বাহাউদ্দিন আপনাদের সাথে আছি’। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত লোকজনকে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে শোনা যায়। নির্বাচন বানচালের চেষ্টায় লিপ্তদের বিরুদ্ধে এ সচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়েছেন করেছেন মর্মে নৌকা মার্কার প্রার্থীর এ মন্তব্য আইনত গ্রহণযোগ্য নয়। 

নির্বাচন বানচালের নাশকতামূলক যেকোনো কর্মকাণ্ড দেশের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ। এর বিরুদ্ধে আইনানুগ নেওয়ার দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থী তার কর্মী-সমর্থকদেরকে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হাত পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারেন না। 

নিবন্ধিত কিংবা অনিবন্ধিত, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কিংবা নির্বাচন বর্জনকারী যেকোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করার আইনানুগ ও সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। নৌকা মার্কার প্রার্থীর অনুরূপ নির্দেশনা সুষ্ঠু, অবাধ, উৎসবমুখর ও ভীতিমুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত করার শামিল। অনুরূপ নির্দেশনা নির্বাচনী আইনের পরিপন্থি এবং নির্বাচনী আচরণ বিধির লঙ্ঘন মর্মে অত্র কমিটির অভিমত।

অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নৌকা মার্কার প্রার্থীর বর্ণিত নির্দেশনা ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপল অর্ডার ১৯৭২’ এর আর্টিকেল ৭৩ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ১১(ক) বিধি স্পষ্ট লঙ্ঘন মর্মে প্রতীয়মান হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসন কুমিল্লা-৬ এর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণাকালে ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপল অর্ডার ১৯৭২’ এর আর্টিকেল ৭৩ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ১১(ক) বিধি ভঙ্গ করায় তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে অনুসন্ধান কমিটি।

এসআর/কেএ