রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১ এর যৌথ অভিযানে নাশকতার অভিযোগে নয়জনকে আটক করা হয়েছে। 

তবে, রেল খাতের ঠিক কোন কোন ঘটনায় তারা জড়িত বা কোন ট্রেনে তারা নাশকতা বা আগুন দিয়েছে, সে-সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি র‍্যাব।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১২টায় বিমানবন্দর রেলস্টেশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় আজ সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

‘তারা সামান্য কিছু উৎকোচের বিনিময়ে চলমান হরতাল-অবরোধে রেললাইন ও ট্রেনে নাশকতা করত। সম্প্রতি নেত্রকোণা থেকে তেজগাঁও রেলস্টেশনে আসা একটি ট্রেনের তিন বগিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মা-শিশুসহ চারজন নিহত হন। নির্মম ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সহযোগিতায় সন্ধ্যা থেকে অভিযান চালিয়ে নয়জনকে আটক করা হয়েছে।

‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, তারা কোনো কুচক্রী মহলের হয়ে স্বল্প টাকার বিনিময়ে অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করত। তারা বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করত। কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে বিভিন্ন ধরনের মামলা হয়েছে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক আরও বলেন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে আমরা রেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাব। যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে।

ভবিষ্যতে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা আছে কি না, থাকলে বাড়তি কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে মোসতাক আহমদ বলেন, ‘প্রথমে বাস-ট্রাকে অগ্নিসন্ত্রাস হতো। অতি সম্প্রতি রেলে নাশকতা হচ্ছে। এ নাশকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।’

নাশকতাকারী যে-ই হোক রেহাই পাবে না— উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন রেলস্টেশনে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আমাদের লোকজন আছে। ট্রেন আসা ও যাওয়ার সময় আমরা নজরদারি করে যাচ্ছি। আশা করি, নাশকতাকারীরা এ ধরনের কাজ করতে আর সাহস দেখাবে না।’

ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রেলওয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের কোনো গাফিলতি ছিল কি না— জবাবে এ র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে আমাদের যত ধরনের সাপোর্ট দরকার, তা আমরা করব।

নাশকতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে কি না— উত্তরে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাদের আটক করেছি। তারা সন্দেহভাজন নাশকতাকারী। আগেও তারা বিভিন্ন নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিল, মামলাও রয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোসতাক আহমদ বলেন, টঙ্গী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যেসব অপরাধী রয়েছে, তাদের ডাটাবেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। তারা প্রতিনিয়ত নজরদারির মধ্যে আছে।

ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সরাসরি জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার বা শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে কি না— জবাবে র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, আমরা আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করব। একই সঙ্গে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। মূল হোতা কিংবা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারলে আপনাদের জানাব।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে নেত্রকোণা থেকে ছেড়ে আসা ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক নারী ও তার শিশুসন্তানসহ চার যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যান। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।

ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। যদিও প্রাথমিকভাবে রেলওয়ে পুলিশের ধারণা, সেটি কোনো নাশকতা ছিল না। ইঞ্জিনের সাইলেন্সার পাইপ থেকে নির্গত ধোঁয়া চটের বস্তায় বাধাগ্রস্ত হয়ে আগুন লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

এরও আগে ১৩ ডিসেম্বর ভোর চারটার দিকে গাজীপুরের ভাওয়ালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের একটি অংশ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। ওই পথে যাওয়ার সময় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। ওই দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও অন্তত ১২ জন আহত হন। মূলত রেলপথে এসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড রুখতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সেই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

জেইউ/কেএ