আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে আরো বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ১১টি সংগঠনের মোর্চা ‘ইলেকশন অবজারভার অ্যালায়েন্স’। 

সংগঠনটি মনে করছে, যে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তারা উগ্র গোষ্ঠির মাধ্যমে নির্বাচনের আগে যে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারে। নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন ও পরে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাড়াতে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা।  

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ ও দাবি তুলে ধরা হয়। 

লিখিত বক্তব্য মোর্চার নির্বাহী পরিচালক জাহানারা ফারুক মলি বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত ১১টি সংগঠনের মোর্চা ইলেকশন অবজারভার অ্যালায়েন্স হিসেবে আমরা বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে থাকি। এবারও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবো।

তিনি বলেন, অ্যালায়েন্সের লক্ষ্য হল আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ পূর্বক একটি নিরপেক্ষ প্রতিবেদন তৈরি করে উপস্থাপন করা এবং নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করা। দ্বাদশ নির্বাচনে ৩ হাজার ৮৯৬ জন পর্যবেক্ষক নির্বাচনের পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ হবে অর্থবহ। অন্যথায় বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার প্রভাব সাধারণ ভোটারদের মাঝে পড়েছে বলে আমরা ধরে নেব।

তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল, প্রভাবশালী প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের তলব এবং শুনানির মাধ্যমে পুনরায় প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া এসব কার্যক্রম কমিশনের কার্যক্রমগুলো ইতিবাচক বলে আমারা মনে করি।

সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বললেও নির্বাচনে ভোটারদের জন্য নির্বাচন কমিশন স্মার্ট কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনেক প্রকল্প ও কার্যক্রম নিলেও স্মার্ট-ভোটকেন্দ্রের কোনো কথা সরকার বা নির্বাচন কমিশন বলেনি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু ভোটকেন্দ্র রয়েছে যেখানে এক শ্রেণীর ভোটার ভোট দিতে আগ্রহী হয়না। 

এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ, নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, দ্রুত সময়ে ভোট দেওয়া, সকল প্রার্থীদের প্রতিনিধি কেন্দ্রে উপস্থিতির নিশ্চিত করা, নিরাপত্তা দেওয়া, কোনো প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান তারা। এসব কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারলে সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন তারা। এর কোনো কিছু ব্যত্যয় হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

জাহানারা ফারুক মলি বলেন, জাল ভোট, ব্যালট বক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্রে আসা ও ভোটদানে বাধা প্রদান ভোটের আগে অবৈধ অর্থের লেনদেনসহ বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন সমূহের অতি উৎসাহী কর্মীদেরকে থামাতে হবে। কারণ এর আগে স্থানীয় নির্বাচনে তাদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

নির্বাচনে বড় ধরনের নাশকতার শঙ্কা প্রকাশ করে পারে-ইলেকশন অবজারভার অ্যালায়েন্সের এই কর্মকার্তা বলেন, যেসকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা উগ্র গোষ্ঠীদের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে আরো বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারে। তাই নির্বাচনের আগে ও  নির্বাচনের দিন এবং পরে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপদ ভোটকেন্দ্র নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশের কিছু সুশীল সমাজ নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পরোক্ষ প্রচেষ্টা বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকতে হবে। এ বিষয়ে সাইবার ক্রাইমসহ নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রশাসনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রধান রাজনৈতিক দলসহ অনেক দল নির্বাচনে না আসায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে জাহানারা ফারুক মলি বলেন, কারা নির্বাচনে আসছে, আর কারা আসছে না এটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় না। নির্বাচনের পরিবেশ, ভোটারদের ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এসব বিষয়ে আমাদের কাজ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, হিউম্যান রাইটস ভয়েস এর উপদেষ্টা ও ইলেকশন অবজারভার অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস- সভাপতি আইনুন্নাহার, হিউম্যান রাইটস ভয়েসের নির্বাহী প্রধান নুরুল আমিন, হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশের পরিচালক রাজ প্রমুখ।

এনএম/এমএসএ