মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেডিকেল কোচিংয়ের পরিচালক ও ৫ চিকিৎসকসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেপ্তাররা হলেন- দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন, ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল, মো. রায়হানুল ইসলাম সোহান, বকুল রায় শ্রাবণ, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিটস কোচিংয়ের পরিচালক মো. আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু, ডা. মো. সোহানুর রহমান সোহান ও ডা. তৌফকিুল হাসান রকি।

এই ৭ জন ছাড়াও পৃথক একটি অভিযানে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ডা. ফয়সাল আলম বাদশা এবং ডা. ইবরার আলমকে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৯টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও চেকবই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে সিআইডির পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান এ তথ্য জানান।

আজাদ রহমান বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিনাজপুর, নীলফামারী, ঢাকা জেলায় অভিযান চালিয়ে মেডিকেল কলেজের প্রশ্নফাঁস চক্রের গুরুত্বপূর্ণ হোতাসহ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। গ্রেপ্তারদের কাছে থেকে চক্রের অন্যান্য সদস্য ও অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে।

মেডিকেলের প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে যেভাবে এল ইউপি চেয়ারম্যান

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ২০১০ সাল থেকে তিনি প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। চক্রটির মাস্টারমাইন্ড জসীমের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। সাজ্জাদ ২০১৭ সালের মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের অন্য আরেকটি মামলারও এজাহারভুক্ত আসামি। সাজ্জাদ উত্তরবঙ্গের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে কোটি টাকার উপরে আয় করেছেন। আগেও গ্রেফতার একাধিক আসামি ১৬৪ ধারায় সাজ্জাদের নাম বলেছে এবং জসীমের গোপন ডায়েরিতেও তার নাম ও ফোন নাম্বার পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু নীলফামারির সৈয়দপুর উপজেলার বিটস নামের একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক। এ ছাড়া তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক। আগেও গ্রেফতার ডা. জিল্লুর হাসান রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ইতোমধ্যে তাদের বেশকিছু শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেছে সিআইডি।

সিআইডি মুখপাত্র আরও বলেন, ডা. সোহানুর রহমান সোহান বিট'স কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পুর কাছ থেকে ২০১৩ সালে প্রশ্ন পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন।

ডা. ফয়সালের বিষয়ে তিনি বলেন, ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে ২০১০ সালে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়ে জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান লাভ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর যক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সার্ভেইলান্স মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ডা. ফয়সাল পরবর্তীতে প্রশ্নফাঁস ব্যবসার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন।

অন্যদিকে ডা. তৌফিকুলের বিষয়ে বলেন, ডা. তৌফিকুল ইসলাম রকি আরেক অভিযুক্ত ডা. জিল্লুর হাসান রনির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। তারা দুজনই রংপুর মেডিকেল থেকে পাশ করেছেন। সেই সুবাদে প্রশ্নফাঁসের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। রকি বিট'স কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন। রকি, হাপ্পু এবং রনি মিলে অনৈতিক উপায়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ডা. রনি তার ১৬৪ ধারায় ডা. রকির কথা বলেছেন।

ডা. ইবরার যেভাবে জড়িত হলেন

রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা গ্রেপ্তার ডা. ইবরার আলমও ডা. জিল্লুর হাসান রনির সহযোগী ছিলেন। তার কথা ডা. রনি ১৬৪ ধারায় বলেছেন। ইবরার ২০১৩ এবং ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ডা. রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে তা সরবরাহ করেছিলেন। এদের অনেকেই বিভিন্ন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। 

ডা. রায়হানুল যেভাবে জড়িত হলেন

গ্রেফতার রায়হানুল ইসলাম সোহান এবং বকুল রায় শ্রাবণ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। দুজনই একই স্কুলে পড়ার সুবাদে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রায়হানুল ২০১৫ সালে তার এক মামার মাধ্যমে মেডিকেলের ফাঁস করা প্রশ্ন পায় এবং বকুলকে তা সরবরাহ করে। বকুল তার ৪ ভর্তিচ্ছু ছোট ভাইয়ের কাছে সেই প্রশ্ন বিক্রি করে। ৪ জনই দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে।

ডা. সাইফুল যেভাবে জড়িত হলেন

গ্রেপ্তার ডা. সাইফুল আলম বাদশা ২০১০ সালে সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর প্রশ্নফাঁস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি করিয়েছেন।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এমএসি/এমজে