১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে পথিকৃৎ ছিলেন সাংবাদিকরা। অবরুদ্ধ দেশে পাকিস্তানের হানাদারবাহিনীর বুটের নিচে শহীদ সাবের, শহিদুল্লাহ কায়সারদের মতো সাংবাদিকরা স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনো আপস করেনি। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে মহান সাংবাদিকদের প্রকৃত ইতিহাসের সন্ধান করতে হবে। সঠিক ইতিহাস লিখতে হবে। 

আজ (বুধবার) প্রেস ক্লাব জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধ : ইতিহাস চেতনা ও অদম্য বাংলাদেশের গল্প’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
 
বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের অঙ্গনটাও স্মৃতিকাতর করে তোলে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি গোলা জাতীয় প্রেস ক্লাবের দোতলায় আঘাত করেছিল। তখন সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ সেখানে অবস্থান করেছিলেন। তখন তিনি আহত হয়েছিলেন। পরে চিকিৎসা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

তিনি বলেন, শহীদ সাবের অল্প বয়সে সাহিত্য দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছিলেন। সে সময়ে তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন। প্রেস ক্লাব ও পত্রিকার সঙ্গে আত্মিক বন্ধন কখনও তিনি ছিন্ন হতে দেননি। সারাদিন প্রেস ক্লাবে কাটাতেন। চুল-দাড়িতে অবিন্যস্ত সাবের চকিতে জ্বলে উঠতেন। প্রেস ক্লাব ছিল তার আশ্রয়, সংবাদ (দৈনিক পত্রিকা) ছিল রাতের ঘুমের স্থান। ২৫ মার্চ যখন সংবাদের অফিস দগ্ধ হয় সেখানে তিনি পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী শহীদুল্লাহ্ কায়সার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারাবন্দী ছিলেন। আরেকজন শহীদ সিরাজউদ্দীন হোসেন।  ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার শিকার। অবরুদ্ধ সময়ে ইত্তেফাক পত্রিকার হাল ধরেছিলেন। অবরুদ্ধ দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বুটের নিচে তিনি স্বদেশি মুক্তির আকুতি ইত্তেফাক পত্রিকায় তুলে ধরেছিলেন। সাংবাদিক জগতে তিনি নজির স্থাপন করেছেন। এমন আরও আছেন— তোফাজ্জেল হোসেন মানিক, সিরাজউদ্দীন হোসেন। বঙ্গবন্ধু যে জাতীয় জাগরণ তৈরি করেছেন, সেখানে সাংবাদিকদের ভূমিকা আমাদের নানাভাবে অনুপ্রাণিত করে। তারা মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে দুইজন পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিক নিখোঁজ হয়েছেন। সাংবাদিকরা আপসহীন মনোভাব দেখিয়েছেন, তাই তাদের হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সাংবাদিকতায় কতটুকু তাদের (মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের) আদর্শ ধরে রাখতে পেরেছি?

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সাংবাদিকতায় সবসময় নিরপেক্ষতা থাকে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংবাদিকরা স্পষ্টভাবে দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি  ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক, প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আইয়ুব হোসেন ভূইয়া প্রমুখ।

ওএফএ/এনএফ