আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়া কোনো প্রকার সভা-সমাবেশ না করার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একইসঙ্গে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। ইসির এ সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

ইসির নির্দেশনা বাস্তবায়নে আপনারা কি মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেবেন? এ প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নির্দেশনা পালনের জন্য যাদের যাদের দায়িত্ব, আমার মনে হয় চিঠি অনুযায়ী তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’

নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগে পর্যন্ত যেকোনো দলের সভা, সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দিতে বলেছে ইসি।‌ গণতান্ত্রিক দেশে এটা সঠিক কি না। এটা সংবিধান পরিপন্থি হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো অতি সাধারণ বিষয়। যেহেতু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাই এখন একটা বিশেষ সময়। প্রতিটি দল তাদের প্রার্থী নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাবে। প্রচারণার সময় বিভিন্ন দল মুখোমুখি হতেই পারে। সেখানে যদি আবার আরেকটা নতুন দল নির্বাচন ছাড়া অন্য কথা বলে, সেক্ষেত্রে ইসি যা বলেছে সেরকম ব্যাঘাত হতেই পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যেটা মনে করেছেন, আমি মনে করি সেটি যথার্থই মনে করেছেন। সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে যাতে নির্বাচনটি হয় আমার মনে হয় এজন্যই নির্দেশনাটা দিয়েছেন। সঠিক, সুন্দর ও নিরপেক্ষভাবে একটি নির্বাচন আয়োজনের জন্য উনি (সিইসি) যা যা বলছেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সেগুলো করবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এই নির্দেশনাকে সংবিধান পরিপন্থি মনে করছেন কি না? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ইসি তো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা যখন একটি নির্দেশনা দিয়েছে, তারা তো সংবিধান দেখেই দিয়েছে। এখানে সংবিধান লঙ্ঘন হওয়ার কিছু নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কীভাবে হবে সেটি তারা জানে।’

নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক বেশি অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘মোটেই অবনতি হবে না। অবনতি করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে সেটিও আপনারা দেখছেন। জায়গায় জায়গায় বাস পুড়িয়ে দিচ্ছে, জায়গায় জায়গায় রেললাইন উঠিয়ে দিচ্ছে। সেখানে এগুলোকে স্বাভাবিক করার জন্য ইসি তাদের দৃষ্টিতে যেটা মনে হয়েছে সেটিই তারা ঘোষণা দিয়েছে।’

বিএনপি যাতে আগামী ১৮ ডিসেম্বরের পর সভা-সমাবেশ না করতে পারে সেজন্য কী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আপনি ইসিকে জিজ্ঞাসা করবেন। ইসি তো স্পষ্টই বুঝতে পারছে যে, তারা (বিএনপি) নির্বাচনে না এসে ধ্বংসের খেলায় নেমেছে। সেই জায়গা থেকে নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় এবং জনগণ যাতে সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারে সেজন্যই হয়ত এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।’

এর আগে, মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের সই করা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে ইসি বলেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ধার্য করা রয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত নির্বাচনী কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোটদানে নিরুৎসাহিত হতে পারে এরূপ কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখা বাঞ্ছনীয়।

এ অবস্থায়, আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হলো।

এসএইচআর/কেএ