মাত্র ২৫ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে টিএসসি আসতে পেরেছি। বিষয়টি আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। মেট্রোরেলের ফলে আমাদের কত বড় উপকার হয়েছে, সেটি বলে বোঝানো যাবে না। —এভাবেই দ্রুতগতির বাহন মেট্রোরেলে চড়ার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইফফাত কবির।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ১৪ মিনিটে প্রথমবারের মতো মেট্রো ট্রেন থেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার টিএসসি স্টেশনে। শুরুতে মতিঝিল থেকে উত্তরা অভিমুখে (আপলাইন) এবং পরে সকাল সাড়ে ৭টায় উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল অভিমুখে (ডাউনলাইন) মেট্রো ট্রেনে টিএসসি স্টেশনে যাত্রীরা ওঠানামার সুযোগ পান।

দ্রুতগতির মেট্রো সার্ভিসে স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা বলেন, মেট্রোরেল নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষার্থী ইফফাত কবির বলেন, দারুণ একটা অনুভূতি। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। মাত্র ২৫ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে এখানে চলে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে মেট্রোরেলের মাধ্যমে উপকৃত হবেন। এত দ্রুত ঢাকার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আসার বিষয়টি আসলেই কল্পনাতীত ছিল। ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে এখন আর কষ্ট করতে হবে না। খুব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসা যাবে। আমরা খুবই আনন্দিত।

মেট্রোরেলের বদৌলতে আর যানজটে বসে থাকতে হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন,  শিক্ষার্থীদের সময় অপচয় বন্ধ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বা পাবলিক বাসে উত্তরা থেকে এখানে আসতে আমার অনেক সময় চলে যেত। তাছাড়া এটা একটা ঝামেলার ব্যাপারও। এসব সমস্যার সমাধান মেট্রোরেলের মাধ্যমে হয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে এটি সরকারের খুবই ভালো একটি উদ্যোগ।

কাজল নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, খুব ভালো লাগছে। কোনো যানজট ছাড়া স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পেরেছি। অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। আমরা প্রত্যাশা করি, দ্রুত পুরোদমে মেট্রোরেল চালু করা হবে।

শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, টিএসসি স্টেশন চালু হওয়ায় মেট্রোরেলের সুফল পাবেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বুয়েট, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ আশপাশের বহু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও।

প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে চড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আকাশ। তিনি বলেন, টিএসসি স্টেশন চালু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন শিক্ষার্থীরা। অল্প সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়া এবং আসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে মেট্রোরেল। আমরা যারা দূর থেকে আসতাম, অনেক সময় লাগত। এখন যেহেতু মেট্রো স্টেশন চালু হয়েছে, সময়ের অপচয় কমে আসবে। সরকারকে এত সুন্দর উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই।

শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, চাকরিজীবীরাও বললেন স্বস্তির কথা। সেলিনা পারভীন নামের এক চাকরিজীবী বলেন, নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য একটি সুন্দর উপহার। ঢাকার ভয়াবহ যানজটের মধ্যে মেট্রোরেল আমাদের জন্য বড় একটি স্বস্তি। ট্রেন চলাচলের সময় যদি বাড়ানো হয় তবে সাধারণ মানুষ আরও বেশি উপকৃত হতে পারবে। একইসঙ্গে মেট্রো ট্রেন ব্যবহারে সাধারণ মানুষকেও যত্নশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আজ টিএসসি ও বিজয় সরণি স্টেশন দুটি চালুর পর মেট্রোরেলের ১৭টি স্টেশনের মধ্যে চালু হওয়া বাকি থাকল আরও তিনটি স্টেশন– কারওয়ান বাজার, শাহবাগ এবং কমলাপুর স্টেশন। বর্তমানে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইন বর্ধিত করার কাজ চলছে। বাকি স্টেশনগুলোও এ মাসের মধ্যে চালুর কথা রয়েছে।

আগে থেকে চালু থাকা ১২টি মেট্রো স্টেশন হচ্ছে— উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল। আজ থেকে এ তালিকায় যুক্ত হলো বিজয় সরণি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন।

আরএইচটি/এসএসএইচ