পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, পুলিশ ব্লাড ব্যাংক কোভিডের সময় ৫ হাজার ১০০ ব্যাগ প্লাজমা দিয়েছে, যা বিশ্বে কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্লাজমা দেওয়ায় মধ্যে এটি রেকর্ড। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে জাতির পিতার আহ্বানে পুলিশ সদস্যরা জীবন দিয়েছেন, তেমনি প্রতিনিয়ত দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়ও পুলিশ সদস্যরা পিছপা হন না। করোনায় চরম বিপর্যয়ের সময় নিজের জীবন বাজি রেখে পুলিশ জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের শিরু মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আইজিপি বলেন, সন্তানরা যেখানে বাবা-মায়ের মরদেহ ফেলে ছেড়ে চলে গেছে, সেখানে পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসেছেন। পুলিশ সদস্যরা মানুষকে বলেছেন, আমরা বাইরে আছি আপনারা ঘরে থাকুন। এমনকি মানুষের ঘরে খাবারও পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া, অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে গেছে, নিজেরা জানাজা পড়ে মৃতদের দাফনের ব্যবস্থা করেছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ সদস্যরা ব্লাড ব্যাংকে নিজের রক্ত দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় বদ্ধ পরিকর। এই ব্লাড ব্যাংক এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছে, আগামী দিনেও এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর।

ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। আইনি সেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে পুলিশের ভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে মানসিকতা, সেটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে কোভিডের সময়।

অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনাকালে সর্বোচ্চ পরিমাণ প্লাজমা দিয়েছে এ পুলিশ ব্লাড ব্যাংক। যা পৃথিবীর ইতিহাসে আমাদের পুলিশ বাহিনী ছাড়া কেউ দেয়নি। আমি মনে করি, এই উদ্যোগ অন্য প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে আলো ছড়িয়ে দেবে।

তিনি বলেন, রক্ত দিলে আপনার শরীরে কোনো অসুবিধা আছে কি না জানতে পারবেন। কারণ রক্ত নেওয়ার আগে অন্যকোনো রোগ আছে কি-না পরীক্ষা করে দেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যদের সুস্থতার পরিমাণ বেশি বলেই এতো পরিমাণ রক্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কিডনি ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা সফলতা দেখিয়েছেন। আমাদের এখানে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টে যেখানে তিন লাখ টাকা লাগে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে লাগে ৪০ লাখ টাকা। আর লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টে আমাদের এখানে ২০ লাখ লাগে, আর পার্শ্ববর্তী দেশে লাগে এক কোটি।

তিনি বলেন, প্রতিদিন দুর্ঘটনায় অনেক লোক মারা যায়। কিন্তু তাদের ৮টা অর্গান অন্য মানুষের বাঁচার কারণ হতে পারে। এসব অর্গানের জন্যও একটা ব্যাংক তৈরিতে যদি পুলিশ সদস্যরা উদ্যোগ নেন, তাহলে অনেক সুবিধা হবে। সারা ইসলাম নামে একটা মেয়ে মৃত্যুর আগে ২টি কর্নিয়া ও ২টি কিডনি দিয়ে গেছে। সারা ইসলাম মাটির সঙ্গে মিশে গেছেন, কিন্তু তার অর্গান দিয়ে এখন চারটি মানুষ বেঁচে আছে।

এমএসি/এসকেডি