অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীর শ্যালক গোলাম রসূলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

প্রায় ২৪ কোটি টাকার এই অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতা করার অভিডোগে বাবুল চিশতী, তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতী ও শ্যালক গোলাম রসূলের বড় ভাই মোস্তফা কামালকেও আসামি করা হয়েছে।

রোববার (২৯ ডিমেম্বর) কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফয়সাল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গোলাম রসূল ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার ২১০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন এবং তিনি ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামি বাবুল চিশতী তার শ্যালক গোলাম রসূলের নামে যমুনা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের হিসাবে ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ১০ কোটি ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা জমা করেন। অপর আসামি রাশেদুল হক চিশতী ২০১২ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তার ছোট মামা গোলাম রসূলের নামে যমুনা ব্যাংকের একাধিক হিসাবে ছয় কোটি ৪৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা করেন।

এছাড়া আরেক আসামি মোস্তফা কামাল তার ছোট ভাই গোলাম রসূলের নামে ফারমার্স ব্যাংকের চারটি হিসাবে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এক কোটি ২০ হাজার টাকা জমা করেন।

যেভাবে মামলার জালে চিশতী
২০১২ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেওয়া ফারমার্স ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর পরই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। আস্থার সংকট তৈরি হলে আমানতকারীদের অর্থ তোলার চাপ বাড়ে। পরিস্থিতির অবনতি হলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী। পরিচালকের পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তারা।

জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তদন্তে ব্যাংকটির সাবেক দুই শীর্ষ ব্যক্তির অনিয়ম তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকটির গ্রাহকের ঋণের ভাগ নিয়েছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতী। এর মাধ্যমে দুজনের নৈতিক স্খলন ঘটেছে এবং তাঁরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তবে মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে এখন পর্যন্ত দুদকে তলব করা হয়নি, কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। মূলত এরপরই চিশতীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে। 

মামলায় বলা হয়, এসব টাকা বাবুল চিশতী, তার ছেলে রাশেদুল ও শ্যালক মোস্তফা কামাল তাদের আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান ও মালিকানা গোপন করে বৈধ করার উদ্দেশ্যে আসামি গোলাম রসূলের বিভিন্ন হিসাব নম্বরে জমা করেন। যা মূলত তাদের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ।

এসব অভিযাগে আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইন- ২০১২ এর ৪(২) ও ৪ (৩) এবং দুদক আইন- ২০০৪ এর ২৭ (১) ও ২৬ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বাবুল চিশতী পরিবারের বিরুদ্ধে এ যাবৎ এক ডজনের বেশি মামলা করেছে দুদক।

আরএম/এনএফ