স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে ইসিতে ৭৬ বছরের বৃদ্ধা
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবন প্রাঙ্গণে ৭৬ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা দুজনের কাঁধে ভর করে লাঠি হাতে বের হয়ে আসছিলেন। সঙ্গে বেশ কয়েকজন মানুষ। বেলা তখন প্রায় সাড়ে ১২টা। এদিকে ইসি অডিটরিয়ামে চলছে বাতিল হওয়া প্রার্থীদের শুনানি। এরমধ্যেই এমন জায়গায় সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধার এগিয়ে আসা দেখে সংবাদকর্মীসহ সবার চোখ আটকে যায়। সবার প্রশ্ন তিনি এখানে কি করছেন?
কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে জানা গেল, তিনি ঢাকা থেকে প্রায় ১৫২ কিলোমিটার দূরের নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন। বার্ধক্য তার দেহকে কাবু করেছে ঠিকই। কিন্তু মনে বার্ধক্যের ছাপ পড়েনি। পাশে থাকা দুইজনের কাঁধে ভর করে সঙ্গে একটি লাঠি নিয়ে তার প্রার্থীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন।
বিজ্ঞাপন
তার পাশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তার নাম মনোয়ারা খাতুন। ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি। সে হিসেবে তার বর্তমান বয়স ৭৬ বছর।
কেন এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মনোয়ারা খাতুন ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলেন- নোয়াখালীর আমাদের প্রার্থী পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলাম। রায়ে আমাদের প্রার্থী বৈধ হয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
জানা গেছে, নোয়াখালী-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খন্দকার আর আমিনের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরজনিত সমস্যার কারণে রিটার্নিং অফিসার তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেন। পরবর্তীতে তিনি ইসিতে আপিল করেন। আজ তার শুনানি ছিল। সে শুনানিতে অংশ নিয়ে এক শতাংশ ভোটারের পক্ষে সাক্ষ্য দিতেই বয়োবৃদ্ধ মনোয়ারা খাতুনের আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনে আসা। যদিও সাক্ষ্য গ্রহণ, শুনানি শেষে নোয়াখালী-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খন্দকার আর আমিন প্রার্থী হিসেবে বৈধতা পেয়েছেন।
নোয়াখালী-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খন্দকার আর আমিন বলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে রিজাইন (পদত্যাগ) দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি এ আসন থেকে। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরজনিত কারণে আমার প্রার্থিতা বাতিল করে দেওয়া হয়। পরে আমি ইসিতে আপিল করার পর শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণের পর আমার প্রার্থিতা বৈধ পেয়েছে। আশা করছি এ আসন থেকে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।
আরও পড়ুন
এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম চলছে। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে আপিল শুনানি শুরু হয়। আপিল শুনানিতে সভাপতিত্ব করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। উপস্থিত আছেন অন্য চার কমিশনারসহ ইসি সচিব।
নির্বাচন কমিশনসূত্রে জানা গেছে, ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে (বেজমেন্ট-২) আপিলের শুনানি প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ৯৫-২০০ নম্বর আপিল, ১২ ডিসেম্বর ২০১-৩০০ নম্বর আপিল, ১৩ ডিসেম্বর ৩০১-৪০০ নম্বর আপিল, ১৪ ডিসেম্বর ৪০১-৫০০ নম্বর আপিল এবং ১৫ ডিসেম্বর ৫০১ থেকে অবশিষ্ট আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই কার্যক্রম। শেষ হয় ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। বাছাইয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ১ হাজার ৯৮৫ জন প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৭৩১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র। এরমধ্যে ৫৬১ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেছেন।
এএসএস/পিএইচ