ছোটবেলা থেকেই প্রিয়াঙ্কার স্বপ্ন ছিল ফায়ার সার্ভিসের যোগ দেওয়ার, মানুষের সেবা করার। সাহসিকতার সঙ্গে অগ্নিসেনার দায়িত্ব পালন করার। আজ সেটি মিথ্যে বা শুধু স্বপ্ন নয়, সত্যিই প্রিয়াঙ্কার পরিচয় এখন অগ্নিসেনা।

প্রিয়াঙ্কা বলছিলেন, অনলাইনে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে ফায়ার ফাইটার হিসেবে নারীদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখি। স্বপ্নপূরণের সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইনি আবেদন করি। মনে ভেতর লালন করা সুপ্ত স্বপ্ন ছিল ফায়ার সার্ভিসের প্রথম নারী ফায়ার ফাইটার হওয়ার। সেটি আজ সত্যি। আমি আজ ফায়ার ফাইটার।

প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নারীর ক্ষমতায়নের স্লোগানকে ধারণ করে সব সেক্টরেই কম বেশি নিয়োগ পাচ্ছেন নারীরা। সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। এতোদিন বিজিবি, পুলিশ, কারাগারে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও ছিল না ফায়ার সার্ভিসের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায়। এবার সেখানেও নারী ফায়ার ফাইটার নিয়োগ দিয়েছে দপ্তরটি।

সারাদেশ থেকে ২ হাজার ৭শর বেশি প্রার্থী থেকে সব যোগ্যতা ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ১৫ নারীকে নিয়োগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যা ফায়ার সার্ভিসের ইতিহাসে প্রথম। সেই ইতিহাসের অংশ হতে পেরে গর্বিত বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়াঙ্কা হাওলাদার।

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে এমপি ফায়ার সার্ভিসে যোগদান করা প্রথম ব্যাচের মহিলা ফায়ার ফাইটারদের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের অনুভূতির কথা জানান ফায়ার ফাইটার প্রিয়াঙ্কা হাওলাদার।

মেহেরপুর জেলা থেকে নিয়োগ পাওয়া প্রিয়াঙ্কা বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি দেখে ভাবছিলাম এখনই সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগদানের। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টে মেয়েদের অগ্রাধিকার আছে, কিন্তু ফায়ার সার্ভিসে ছিল না। যে অগ্রাধিকার মেয়েদের দেওয়া হয়েছে সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ১৫ মেয়ে যোগদান করলাম ফায়ার ফাইটার হিসেবে, এতে আমরা খুবই গর্বিত।

‘আমরা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সর গর্বিত একজন অগ্নিযোদ্ধা হতে চাই। যারা কিনা বাংলাদেশের দুর্যোগ, দুর্ঘটনা ও উদ্ধার কাজে কাজ করবে। এটা আমাদের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ এবং আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এই ডিপার্টমেন্টের একজন ফায়ার ফাইটার হিসেবে যোগদান করতে পেরে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক্যাল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়াসমিন খাতুন বলেন, ফায়ার সার্ভিস যেকোনো দুর্যোগে অংশগ্রহণ করে। ফায়ার ফাইটারদের কাজটি আমার অনেক পছন্দের। ফাইটারদের চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো ভালোবাসতাম। আমি যদি কখনো সুযোগ পাই, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে যোগদান করবো, এমনটিই ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন বুনেছি।

ইয়াসমিন বলেন, আমি যখন ফায়ার সার্ভিসে নারী ফায়ার ফাইটারদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি দেখি আবেদন করি। সুযোগও মিলে গেলো। প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে মহিলা আছে কিন্তু এই ডিপার্টমেন্টে কোনো নারী ছিল না। আমরা এখন ইতিহাসের অংশ।

রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালকের মেয়ে নাজমুল নাহার দিনা। হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থী এই নারী ফায়ার ফাইটার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমার প্রধান লক্ষ্য থাকবে সেবা করা। আমি আমার বাবাকে দেখে উৎসাহিত হয়ে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহী হয়েছি। কিন্তু নারীদের ফাইটার ছিল না বাহিনীতে। তাই আগে কখনো আমি চেষ্টাও করতে পারিনি। এবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখেই আবেদন করি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ফায়ার ফাইটার মহিলা ব্যাচের ১৫ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটা ইতিহাসের একটা অংশ, প্রধানমন্ত্রীর নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই অগ্নিসেনা বা ফায়ার ফাইটার হিসেবে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে ফায়ার সার্ভিসে নারী কর্মকর্তা থাকলেও ছিল না কোনো নারী ফায়ার ফাইটার।  

ফায়ার সার্ভিস ডিজি বলেন, ২৭০০ জনের বেশি প্রার্থী নারী ফায়ার ফাইটার পদে আবেদন করেছিলেন। সেখান থেকে বাছাই করে ১৫ জনকে আমরা নিয়োগ দিয়েছি। গত নভেম্বরে ১৮ তারিখ এই নারী ফায়ার ফাইটাররা যোগদান করেছেন। এরপর তাদের তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একই রকম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, কেন ফায়ার সার্ভিসে মহিলা ফায়ার ফাইটার নিয়োগ করলাম এরকম একটা প্রশ্ন আসতেই পারে। অগ্নি দুর্ঘটনা বা যে কোনো দুর্যোগ দুর্ঘটনায় যেসব মহিলারা আক্রান্ত বা আহত হন তাদের উদ্ধার করার ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। অভিযানে যদি মহিলা ফাইটার থাকে তাহলে কাজটি সহজ হয়। 

আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর ক্ষমতায়নে যে উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেছেন সেটির অংশ হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের নারী ফায়ার ফাইটার নিয়োগ করা হলো।

জেইউ/এসএম