কার মনোনয়ন কেন বাতিল?
নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর বৈধ প্রার্থীর নাম, রাজনৈতিক দলের নাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিবরণী প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশে প্রার্থীদের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৈধতা পেয়েছেন ১৯৮৫ জন প্রার্থী। অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৭৩১ জন প্রার্থীকে। এদের মধ্যে ৪১৬ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত অবৈধ ঘোষিত প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের তালিকা ধরে নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ঠুনকো কারণেও যেমন অনেকের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তেমনি আছে গুরুতর অপরাধ ও ভুল বা অসংগতি।
বিজ্ঞাপন
মনোনয়ন বাতিল হওয়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে দেখা যায়, সমর্থন সূচক তালিকা ও অসম্পূর্ণ ও অসংগতি। কারো মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে ছিল না হলফনামা, কেউ ভুলে সংযুক্ত করেননি, কারো ফরমের ২০ ও ২১ নম্বর অংশ অনুপস্থিত ছিল। কেউ দেননি আয় রিটার্নের কপি। কারো আবার হলফনামায় কোনো পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর ও যোগ্যতার সনদ নেই।
অধিকাংশ মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এক শতাংশ ভোটারের প্রয়োজনীয় সংখ্যা সংযুক্ত করতে না পারা, কারো আবার শতাংশ সমর্থন সূচক তালিকায় গরমিল, কারো এক শতাংশ ভোটারের তথ্য ভুল, এক শতাংশ ভোটার সমর্থন তালিকা যাচাই করে যথাযথ না পাওয়া, কেউ ঋণ খেলাপি, কেউ কর খেলাপি, কেউ বিদ্যুৎ বিল খেলাপি এবং কেউবা হলফনামায় করেছেন গুরুতর ভুল। আবার সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে চাকরির চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন বছর অতিক্রান্ত না হওয়ায় কারো মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
কোনো কোনো প্রার্থী সিআইবির তথ্য অনুসারে ঋণ খেলাপি, কেউ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে গৃহীত পদত্যাগ পত্রের প্রমাণ হিসেবে তথ্য সংযুক্ত করতে না পারায়, কারো মনোনয়ন ফরমে আয়কর তথ্যের ত্রুটি, কোনো প্রার্থীর নিজের নামে ভুল, কারো প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী অনুপস্থিত থাকায় মনোনয়ন বাতিল হয়।
তাছাড়া, কেউ করেছেন মামলা সংক্রান্ত তথ্য গোপন, কেউ নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ ও প্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী উল্লেখ করেননি। কোনো প্রার্থী দুর্নীতি দমন আইনে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েও তা উল্লেখ করেননি, কেউ করেননি সম্পূরক হলফনামা ও দাখিল। কেউ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত পদে থেকেও চেয়েছিলাম মনোনয়ন পেতে, কেউ ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হয়েও ভালো মতো উল্লেখ করেননি। আবার কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন প্রস্তাবকারী ভিন্ন নির্বাচনী এলাকার।
আরও পড়ুন
দেখা গেছে, সমর্থন সূচক তালিকা ও অসম্পন্ন ও অসংগতি, হলফনামা ফরমের ২০, ২১ নম্বর অংশ অনুপস্থিত এবং আয়কর রিটার্ন না দেওয়ায় যাচাই-বাছাইয়ে মনোনয়ন হারিয়েছেন পঞ্চগড়-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো আবু তোয়বুর রহমান। একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আকতারুল ইসলাম সমর্থন সূচক তালিকা ও হলফনামা না থাকায় ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মিলটন রায়ের ফরমের ২০ ও ২১ নম্বর অংশ না থাকায় মনোনয়ন বাতিল হয়। একই আসনের বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিযুদ্ধের প্রার্থী মো. আব্দুল মজিদের হলফনামায় কোনো পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর ছিল না। এছাড়া শিক্ষকতা যোগ্যতার যথাযথ প্রমাণ দাখিল করতে না পারায় তার মনোনয়ন বাতিল হয়।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনের মোছা. তাহমিনা আখতার মোল্লা এক শতাংশ ভোটারের প্রয়োজনীয় সংখ্যা স্বাক্ষরযুক্ত কপি সংযুক্ত না করায় বাতিল হয় মনোনয়ন।
একই কারণে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের মোছা. আশা মনি, দিনাজপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু হুসাইন, দিনাজপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদ পারভেজ, দিনাজপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তোজাম্মেল হক ও দিনাজপুর-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহনেওয়াজ ফিরোজ শুভ শাহর মনোনয়ন বাতিল হয়৷ একই আসনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী জাফর ইকবাল সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিল হয় কর খেলাপি থাকায়।
নীলফামারী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইমরান কবির চৌধুরীর মনোনয়ন ফরমে এক শতাংশ ভোটারের তথ্য ভুল ও চতুর্থ অংশের দ্বিতীয় ভাগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পূরণীয় অংশে কোনো তথ্য না দেওয়ায় বাতিল হয়। এছাড়া, নীলফামারী-১ আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী করুনা ময় মল্লিক আয়কর রিটার্নের কাগজ চাকরি করেননি, নীলফামারী-২ আসনের একই দলের প্রার্থী বিকাশচন্দ্র অধিকারীর হলফনামায় ভুল, নীলফামারী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীনের এক শতাংশ ভোটারের তথ্য ভুল, নীলফামারী-৩ আসনের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী মো. বাদশা আলমগীর কর খেলাপি, নীলফামারী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রোকনুজ্জামান, মো. হুকুম আলী খান, মার্জিয়া সুলতানা এবং নীলফামারী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সিদ্দিকুল আলমের এক শতাংশ ভোটারের তথ্য ভুল থাকায় মনোনয়ন বাতিল হয়।
লালমনিরহাট-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল বাকী, মো.আতাউর রহমান প্রধান, কে এম আমজাদ হোসেন তাজু, লালমনিরহাট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ বর্মন ও মোছা. হালিমা খাতুনের মনোনয়ন বাতিলে সমস্যা ওই একই; তাদের সবার এক শতাংশ ভোটারের তথ্য ভুল। তবে জাকের পার্টির প্রার্থী মো. রজব আলী ফরমের বিশেষ তথ্য দেওয়ায় ও স্বাক্ষর না করায়, আর বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. দেলাব্বর হোসেনের সিআইবির তথ্য অনুসারে ঋণ খেলাপি হওয়ায় মনোনয়ন বাতিল হয়।
লালমনিরহাট-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাবেদ হোসেনের সমস্যা একই। তার এক শতাংশ ভোটার সমর্থন তালিকা যাচাই করে যথাযথ প্রমাণ না পাওয়ায় মনোনয়ন বাতিল হয়।
রংপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশাররফ হোসেন, রংপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার ও মো. সুমনা আক্তারের ১ শতাংশ ভোটের সমর্থন সঠিক নয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী জিল্লুর রহমানের আয়কর ত্রুটিপূর্ণ। পাশাপাশি প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর স্বাক্ষর অনুপস্থিত ছিল।
রংপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এটিএম রাকিবুল বাশারের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সঠিক ছিল না। একই কারণে বাতিল হয় রংপুর-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম তাকিয়া জাহান চৌধুরীর মনোনয়ন।
একই আসন থেকে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ইকবাল হোসেন মামলা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করায় এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. মাহবুল আলমের প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর স্বাক্ষর না থাকায় এবং হলফনামা সঠিক দাখিল না করায় যাচাই-বাছাইয়ে মনোনয়ন হারান।
যাচাই-বাছাইয়ে কার কী কারণে মনোনয়ন বাতিল তা বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন এখানে...
জেইউ/কেএ