নির্বাচনে প্রার্থীদের অবৈধ ঘোষিত মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফেরানোর জন্য আপিল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে আপিলের জন্য সকাল থেকেই ভিড় করছেন মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা। 

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) ইসি সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশে প্রার্থীদের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে সোমবার (৪ ডিসেম্বর)। সারা দেশে ১৯৮৫ জন প্রার্থীকে বৈধ বলে ঘোষণা করেছে ইসি। আর অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৭৩১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।

ইসির পক্ষ থেকে প্রার্থীদের জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু নিয়ম। সেসব মেনেই প্রার্থীদের আপিল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হচ্ছে। মনোনয়ন ফিরে পেতে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের জন্য নির্দেশিত সাধারণ নির্দেশনাগুলো হলো;

১. ঘোষিত তফসিল মোতাবেক ৫-৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে নির্ধারিত বুথে আপিল দায়ের করতে হবে।

২. আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে আইনে বর্ণিত নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে (স্মারকলিপি আকারে) ইসিকে সম্বোধন করে ৭ সেট আপিল আবেদন (১ সেট মূলকপি এবং ৬ সেট ছায়ালিপি) দাখিল করতে হবে।

৩. দাখিল করা আপিল আবেদনের সঙ্গে অবশ্যই রিটার্নিং অফিসারের দেওয়া সার্টিফাইড কপির মূলকপিসহ আপিল
দায়ের সংক্রান্ত সব ধরনের কাগজপত্র (১ শতাংশ ভোটার তালিকা, ঋণ খেলাপি, হলফনামা ও দলীয় মনোনয়ন সংক্রান্ত
কাগজপত্র যার জন্য যেটা প্রযোজ্য) প্রতিটি আপিল আবেদন সেটের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। অন্যথায়, ইসিতে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে না।

৪. আপিলের ক্রমানুযায়ী নির্ধারিত তারিখে সম্মেলন কক্ষে (বেজমেন্ট-২) ইসির মাধ্যমে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এই শুনানিতে প্রার্থী ও প্রার্থীর পক্ষের আইনজীবী ব্যতীত কোনো জনসাধারণ থাকতে পারবেন না।

৫. দায়ের করা আপিলগুলোর বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানো
হবে এবং ইসির ওয়েবসাইটেও (www.ecs.gov.bd) প্রকাশ করা হবে। এছাড়া আপিলের ফল নির্বাচন ভবনের সামনে প্রদর্শিত মনিটরে প্রদর্শন করা হবে৷ একইসঙ্গে রায়ের পিডিএফ কপি রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের ই-মেইল অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে।

৬. আপিলের রায়ের অনুলিপি উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে সেটি যথাযথভাবে পূরণ করে ইসির অভ্যর্থনা ডেস্কে জমা দিতে হবে। নামঞ্জুর আপিলের রায়ের অনুলিপি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে।

অন্যদিকে, দেশের ৬৪টি জেলার জন্য ইসি ভবন প্রাঙ্গণেই করা হয়েছে আলাদা ১০টি বুথ। সেখানেই আলাদাভাবে চলছে আপিল দায়েরের কার্যক্রম। 

এর মধ্যে ১ নম্বর বুথটি স্থাপন করা হয়েছে রংপুর অঞ্চলের জন্য। যেখানে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার প্রার্থীরা আপিল দায়ের করছেন।

২ নম্বর বুথটি স্থাপন করা হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের জন্য। যেখানে জয়পুরহাট, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী,
নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার প্রার্থীরা আপিল দায়ের করছেন।

৩ নম্বর বুথটি স্থাপন করা হয়েছে খুলনা অঞ্চলের জন্য। যেখানে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার প্রার্থীরা আপিল দায়ের করছেন।

8 নম্বর বুথটি স্থাপন করা হয়েছে বরিশাল অঞ্চলের জন্য। যেখানে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার প্রার্থীরা আপিল দায়ের করছেন।

৫ নম্বর বুথটি স্থাপন করা হয়েছে ময়মনসিংহ অঞ্চলের জন্য। যেখানে টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলার প্রার্থীরা আপিল দায়ের করছেন।

৬ নম্বর বুথটি স্থাপন করা হয়েছে ঢাকা অঞ্চলের জন্য। যেখানে মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও
নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রার্থীরা আপিল দায়ের করছেন।

৭ নম্বর বুথটি স্থাপন করা হয়েছে ফরিদপুর অঞ্চলের জন্য। যেখানে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও
শরীয়তপুর জেলার প্রার্থীরা আপিল দায়ের করছেন।

৮ নম্বর বুথটি স্থাপন করা হয়েছে সিলেট অঞ্চলের জন্য। যেখানে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রার্থীরা আপিল দায়ের করছেন।

৯ নম্বর বুথটি স্থাপন করা হয়েছে কুমিল্লা অঞ্চলের জন্য। যেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার প্রার্থীরা আপিল দায়ের করছেন।

আর সবশেষ ১০ নম্বর বুথটি স্থাপন করা হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য। যেখানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও
বান্দরবান জেলার প্রার্থীরা আপিল দায়ের করছেন।

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর থেকে বাছাই শুরু হয়, শেষ হয় ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর।

আরএইচটি/কেএ