দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দুই মাসের মিশন নিয়ে গত ২৯ নভেম্বর ঢাকায় আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চার সদস্যের নির্বাচনী এক্সপার্ট টিমের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন।

রোববার (৩ ডিসেম্বর) আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেলা ১১টায় ইইউ ইলেকশন এক্সপার্ট টিমের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়ে চলে প্রায় সোয়া ১২টা পর্যন্ত।

বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আজকে আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইইউ এক্সপার্ট দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বসতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমিসহ আমাদের যুগ্ম সচিবরা তার সঙ্গে বসেছি। তারা আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবেন। তারা মূলত আমাদের কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছেন, আমরা সেগুলো জানিয়েছি।

তিনি বলেন, প্রতিনিধি দল নির্বাচন পরবর্তী ও পূর্ববর্তী সব বিষয়ে অবজার্ভ করবে। কোড অব কনডাক্টের কোনো ভায়োলেশন হচ্ছে কি না তা দেখবে। তারা আমাদের নির্বাচন কমিশনের আইনগুলো জানতে চেয়েছেন। মূলত আইনগুলো বাংলায় লেখা হওয়ার কারণে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই এই আইনগুলো ইংরেজিতে কোথাও আছে কি না অথবা ইংরেজি করে আমরা দিতে পারবো কি না, এই বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা তাদের কিছু ইংরেজি করা কপি প্রোভাইড করেছি, আর বাকিগুলো কিস্তি করে করে দেব।

অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, মূলত তারা সারা দেশব্যাপী ঘুরবে, এই ব্যাপারে কিছু ইনকয়ারি ছিল, সেগুলো আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। প্রয়োজন হলে আরও কয়েকবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসতে চায় তারা। ঢাকার বাইরে যাওয়া বিষয়ে তাদের নিরাপত্তাসহ সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সিকিউরিটি বিষয়গুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে সারা দেশে যাতায়াত করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের নির্বাচনে কতজন প্রার্থী হয়েছে, কতগুলো দল অংশগ্রহণ করছে, কতগুলো বিদেশি অবজারভার দল আসবে, কতগুলো লোকাল অবজারভার থাকবে এগুলো জানতে চেয়েছে। আলোচনা শেষে আমরা মনে করি তারা আমাদের কথায় কনভিন্সড হয়েছে।

বৈঠকে ইইউ ইলেকশন এক্সপার্ট টিমের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ডেভিড নোয়েল ওয়ার্ড (ইলেকশন এক্সপার্ট), আলেকজান্ডার ম্যাটাস (ইলেকটোরাল এনালিস্ট), সুইবেস শার্লট (ইলেকটোরাল এনালিস্ট) এবং রেবেকা কক্স (লিগ্যাল এক্সপার্ট)।

জানা গেছে, বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না ইইউ। এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানায় ইউরোপের ২৭ দেশের এই জোট।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে গত ২৯ নভেম্বর যৌথসভা করে ইইউ। বৈঠকে সংস্থাটির ১০ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তারা অবাধ ও সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দেয় ইসিকে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ হয়েছে গত ৩০ নভেম্বর। সেখানে ৩০ রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে ২৭১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দেয়।

জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই চলবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।

এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। গত ২ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটারসংখ্যা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।

এএসএস/এসএম