ঢাকা থেকে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন যাচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার কিছু সময় পর হাজারো যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। এ ট্রেনের যাত্রী হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে ভ্রমণকারীদের। আর যাত্রীদের গোলাপ-রজনীগন্ধা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রথম যাত্রী হিসেবে কক্সবাজার যাচ্ছেন গাজীপুরের শ্রীপুরের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক মোহাম্মদ আল আমিন।

তিনি জানান, সরকার যখন প্রথম ট্রেন চালুর উদ্যোগের কথা জানায় তখনই চিন্তা করেছিলাম প্রথম ট্রেনের যাত্রী হবো। দীর্ঘদিন আমার এ ইচ্ছাটি ধারণ করেছি এবং স্বপ্ন পূরণের জন্য অপেক্ষা করেছি। অবশেষে টিকিট হাতে পেয়ে বেশ আনন্দ হচ্ছিল, যেন সোনার হরিণ হাতে পেয়েছিলাম। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রথম ট্রেনের যাত্রী হিসেবে ভ্রমণ করছি, ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছি, এটা আমার জীবনে অনেক বড় পাওয়া।

অপর যাত্রী পর্যটক শাফি কামাল বলেন, আমি বাসে, ট্রেনে, বিমানে- দেশের অনেক জেলা ভ্রমণ করেছি। আমার খুব ইচ্ছে ছিল কক্সবাজার এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রী হবো। আমার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। আমি একটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছি। বহুবার কক্সবাজার গিয়েছি ঘুরেছি, কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ট্যুর করবো। আমি রাতের কক্সবাজার এক্সপ্রেসে কক্সবাজার পৌঁছাবো এবং ফিরতি ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেব। আমি শুধু ট্রেন ভ্রমণের জন্য এসেছি।

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ট্রেনে কক্সবাজার যাচ্ছেন খন্দকার মাসুদ। তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। বাচ্চার স্কুলের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান বায়না ধরেছিল ভ্রমণ করার। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ভ্রমণের চিন্তা ছিল। যখন শুনলাম কক্সবাজার ট্রেন যাচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে আমি বিষয়টি তাদের জানাই। তারাও রাজি হয়ে যায়, বিশেষ করে আমার ছেলে তার জীবনের প্রথম ট্রেন ভ্রমণ, এটা নিয়ে ওর মাঝে বেশ উৎফুল্লতা লক্ষ্য করেছিলাম। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রী হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলে যাত্রীবাহী ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েক দফা পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের সফল কার্যক্রম শেষে গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন উদ্বোধন করেন। ওই সময় তিনি ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দুটি ট্রেন চালুর নির্দেশ দেন।

কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে নতুন এই ট্রেনে মোট ২০টি কোচ রয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে। আসন আছে ১১০০।

ট্রেনের ভাড়া

ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ২ হাজার ৩৮০ টাকা। অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা।

শিহাব খান/এমজে