রজনীগন্ধা ফুল, চকলেট দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে বরণ করে নেওয়া হলো বিরতিহীন আন্তঃনগর কক্সবাজার এক্সপ্রেসের (৮১৩) যাত্রীদের। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায়। এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, স্টেশন ম্যানেজারসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাত্রীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ও কুশল বিনিময় করেন।

অন্যদিকে বিরতিহীন ট্রেনে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে পেরে স্বস্তির কথা জানান যাত্রীরা।

রাবেয়া বসরী নামের এক যাত্রী বলেন, এখনও স্বপ্ন মনে হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে সরাসরি ঢাকায় রেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এটি একটি মাইলফলক। খুব ভালো লাগছে।

আসাদুল্লাহ গালিব নামের আরেক যাত্রী বলেন, মনোভাব ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। খুবই চমৎকার। সুন্দর অভিজ্ঞতা। সরাসরি ট্রেন সার্ভিসের ফলে মানুষের কত বড় উপকার হয়েছে, তা বলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

বিরতিহীন আন্তঃনগর কক্সবাজার এক্সপ্রেস (৮১৩) ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছার কথা ছিল রাত ৯টা ১০ মিনিটে। কিন্তু সেটি ৩০ মিনিট বিলম্বে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছেছে। ট্রেনটির কক্সবাজারের উদ্দেশে রাত সাড়ে ১০টায় প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার কথা রয়েছে।

এদিকে সরেজমিনে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা কক্সবাজারগামী যাত্রীদের অধিকাংশই পর্যটক। ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনযোগে কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সবার চোখে মুখে আনন্দের ছাপ। ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ উচ্ছ্বসিত মানুষের ভিড় দ্রুতই বাড়তে দেখা গেছে।

যাত্রীরা বলছেন, প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের সাক্ষী হওয়ার বিষয়টি দারুণভাবে পুলকিত করছে তাদের। যাত্রীরা প্রত্যাশা করছেন, ননস্টপ এই ট্রেনে যেমন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন ঘটেছে, তেমনই পর্যটন শিল্পেও ঘটবে বিকাশ। কেননা, এতদিন সরাসরি ট্রেনে কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ ছিল না। আগে চট্টগ্রামে ট্রেন থেকে নেমে তারপর বাসে চড়ে কক্সবাজার পৌঁছাতে হতো। এটিকে অনেকেই ঝামেলা মনে করে কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা চেপে রেখেছেন। তবে এখন ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে কক্সবাজার পৌঁছানো যাবে। এটি সাধারণ যাত্রী এবং পর্যটক সবার জন্যই সুফল বয়ে আনবে।

‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সময়সূচি

শুরুতে কক্সবাজার থেকে ৮১৩ নম্বর ট্রেনটি দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে। চট্টগ্রামে ২০ মিনিট বিরতি দিয়ে বিকেল ৪টায় ছেড়ে বিরতিহীনভাবে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছাবে রাত সাড়ে ৮টায়। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ৩ মিনিট বিরতি দিয়ে রাত ৮টা ৩৩ মিনিটে ছেড়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে।

অন্যদিকে, ৮১৪ নম্বর ট্রেনটি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ২ অথবা ৩নং প্ল্যাটফর্ম থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ছেড়ে বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৫৩ মিনিটে। সেখানে ৫ মিনিট বিরতি দিয়ে রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। সেখানে ২০ মিনিট বিরতি দিয়ে রাত ৪টায় ছেড়ে কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে।

ট্রেনের ভাড়া

ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ২ হাজার ৩৮০ টাকা। অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা।

আরএইচটি/এমএইচএন/এসএসএইচ