বহুল প্রতীক্ষিত কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে আজ। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ছেড়ে আসে। রাত ৯টা ১০ মিনিট নাগাদ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে এই ট্রেনের।

ট্রেনটি এখান থেকে রাত সাড়ে ১০টায় আবার কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ননস্টপ ট্রেনটিতে চড়ে প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাবেন যাত্রীরা। তাই তো ট্রেন ছাড়ার অনেক আগেই প্ল্যাটফর্মে চলে এসেছেন ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রীরা। স্টেশনে ঘুরে, গল্প করে, ছবি-সেলফি তুলে সময় পার করতে দেখা যায় তাদের।

সরেজমিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা এসব যাত্রীর অধিকাংশই পর্যটক। ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনযোগে কক্সবাজার যাওয়ার মোক্ষম সুযোগ পেয়ে সবার চোখে মুখেই আনন্দের ঝিলিক। ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ উচ্ছ্বসিত মানুষের ভিড় দ্রুতই বাড়তে দেখা গেছে।

যাত্রীরা বলছেন, প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের সাক্ষী হওয়ার বিষয়টি দারুণভাবে পুলকিত করছে তাদের। যাত্রীরা প্রত্যাশা করছেন, ননস্টপ এই ট্রেনে যেমন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন ঘটেছে, তেমনই পর্যটন শিল্পেও ঘটবে বিকাশ। কেননা, এতদিন সরাসরি ট্রেনে কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ ছিল না। আগে চট্টগ্রামে ট্রেন থেকে নেমে তারপর বাসে চড়ে কক্সবাজার পৌঁছাতে হতো। এটিকে অনেকেই ঝামেলা মনে করে কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা চেপে রেখেছেন। তবে এখন ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে কক্সবাজার পৌঁছানো যাবে। এটি সাধারণ যাত্রী এবং পর্যটক সবার জন্যই সুফল বয়ে আনবে।

ওবায়দুল করিম নামের এক যাত্রী বলেন, কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার রেল লাইন যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য নতুন এক মাইলফলক। এটি সাধারণ মানুষের জন্য অনেক সুফল বয়ে আনবে। স্বল্প সময়ে কক্সবাজার পৌঁছে যাওয়া যাবে। তবে ধীরে ধীরে ট্রেন সার্ভিস যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি যাত্রী সেবার মানও ধরে রাখতে হবে। কেননা, মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ফসল এই রেল লাইন। তাই সাধারণ মানুষকেও যত্নের সঙ্গে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

রাসেল আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাড়ি কক্সবাজার। ট্রেন যাত্রার প্রথম দিনেই টিকিট পেয়ে যাব, এমনটি ভাবিনি। খুব খুশি লাগছে। বাড়িতে যাওয়া এবং আসার ব্যাপারটি অনেক সহজ হয়েছে। শুরুতে কম ট্রেন ছাড়লেও পরে যখন আরও ট্রেন বাড়ানো হবে তখন সবাই এর সুফল পাবে।

‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সময়সূচির ব্যাপারে জানা গেছে, শুরুতে কক্সবাজার থেকে ৮১৩ নম্বর ট্রেনটি দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে। চট্টগ্রামে ২০ মিনিট বিরতি দিয়ে বিকেল ৪টায় ছেড়ে বিরতিহীনভাবে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছাবে রাত সাড়ে ৮টায়। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ৩ মিনিট বিরতি দিয়ে রাত ৮টা ৩৩ মিনিটে ছেড়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে।

অন্যদিকে, ৮১৪ নম্বর ট্রেনটি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ২ অথবা ৩নং প্ল্যাটফর্ম থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ছেড়ে বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৫৩ মিনিটে। সেখানে ৫ মিনিট বিরতি দিয়ে রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। সেখানে ২০ মিনিট বিরতি দিয়ে রাত ৪টায় ছেড়ে কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে।

আর ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ২ হাজার ৩৮০ টাকা। অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা।

আরএইচটি/এমএইচএন/এসএসএইচ