ফাইল ছবি

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার আসামি হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার নতুন অভিযোগ যুক্ত হয়েছে।

তার মালিকানাধীন কোম্পানি বেস্ট হোল্ডিং লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শেয়ার মার্কেটে আইপিও ছাড়ার অনুমতি মিলেছে। যার মাধ্যমে সাড়ে ৩শ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে– এমন অভিযোগ দুদকে জমা পড়েছে।

চলমান পুরোনো অনুসন্ধানের সঙ্গে ওই অভিযোগ যুক্ত করে শুরু হয়েছে অনুসন্ধান। দুদকের একজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিমকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বেস্ট হোল্ডিং লিমিটেডের প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয়ের নামে ব্যাংক থেকে এসভিপি ঋণের মাধ্যমে ১৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করেছেন।

গত ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ৮৮৫তম সভায় বেস্ট হোল্ডিং লিমিটেডের প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে আইপিওর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– ১. লা মেরিডিয়ান হোটেল ২. বেস্ট হোটেলস লিমিটেড ৩. ধামশুর ইকোনমিক জোন লিমিটেড ৪. লাক্সারি কালেকশন ও মেরিয়ট হোটেল ভালুকা ৫. লা মেরিডিয়ান সার্ভিস স্যুট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ৫. ব্রিটিশ চেইন স্কুল হেলিবেরি ভালুকা। এগুলোর মধ্যে কেবল লা মেরিডিয়ান হোটেল চালু আছে। বাকি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে ২০২৪ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে। কিন্তু আইপিওর মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সই করা চিঠির সূত্রে আইপিও অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

চলতি বছরের ৩ অক্টোবর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০.২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা এবং সাড়ে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। দুদক উপ-পরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। ইতোমধ্যে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ওই মামলার আসামিরা হলেন– বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না, বাচ্চুর ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিক এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ২০১২ সালের ৮ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার ৬ নম্বর প্লটের ৩০.২৫ কাঠা জমি ১১০ কোটি টাকায় ক্রয়ের জন্য অপর আসামি আমিন আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিপত্র করেন। চুক্তি করা জমির মূল্য ১১০ কোটি টাকা এবং চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় পরিশোধিত অর্থ ১০ কোটি টাকা। চুক্তিপত্র অনুযায়ী দুটি দলিলে ভূমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। যার মধ্যে ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম দলিলে ১৮ কাঠা জমির দাম ৯ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছ। যেখানে গ্রহীতা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও মিসেস শিরিন আক্তার। অন্যদিকে দ্বিতীয় দলিলে ওই একই বছরে ১২.২৫ কাঠার দাম ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। যেখানে গ্রহীতা হলেন শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। অর্থাৎ জমির মোট রেজিস্ট্রেশন মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনে মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দেখিয়ে অবৈধ আয় গোপন করার চেষ্টা করেন তিনি। এছাড়া জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারের ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার রাজস্বও ফাঁকি দিয়েছেন।

মামলা সূত্র আরও জানায়, জমি বিক্রয় ও প্রকৃত মূল্য গোপন করতে আমিন আহমেদ শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে সহযোগিতা করেছেন। আমিন আহমেদ ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও নগদে ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। অপরদিকে তাদের আয়কর নথিতে জমির জন্য মূল্য প্রদর্শন করেছেন ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৪ টাকা। অর্থাৎ শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর আয়ব্যয় এবং প্রকৃত সম্পদের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়নি। তিনি বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অস্তিত্বহীন ও নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভুয়া ঋণ মঞ্জুর করে আত্মসাৎ করা অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর, ছদ্মাবরণের মাধ্যমে গোপন করেছেন। আসামি আমিন আহমেদ বাচ্চুর অবৈধ অর্থের বৈধতা প্রদানে সরাসরি সহায়তা করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

অন্যদিকে, হোটেল লা-মেরিডিয়ানের স্বত্বাধিকারী আমিন আহম্মেদ ভূঁইয়ার অবৈধ সম্পদের পৃথক আরও একটি অভিযোগ দুদকের অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। দুদক উপ-পরিচালক মোজাম্মিল হোসেন অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

এ বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়ার পর তাকে সম্পদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে। এরপর সম্পদের হিসাব দাখিল করা হলেও অনুসন্ধান কাজ শেষ হয়নি বলে জানা গেছে।

২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর সরকারি সম্পত্তি দখল, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে আমিন আহম্মেদ ভূঁইয়াকে সংস্থাটির তৎকালীন উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেইন মৃধা জিজ্ঞাসাবাদও করেন।

অবৈধ সম্পদের অভিযোগে আমিন আহম্মেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে হোটেল ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন ব্যবসা ও সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার তথ্য উল্লেখ ছিল। এছাড়া নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকায় ৭০০ একর খাস জমি দখল ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ ছিল।

আরএম/এসএসএইচ