আজ রাতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত হবে ২০৩০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোর আয়োজক হওয়ার ভোটাভুটি। সেখানে ঢাকাকে পাশে চেয়েছে সিউল। এ বিষয়ে কথা বলতে এসে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে জানতে চান উত্তর কোরিয়া কেন ঢাকায় দূতাবাস বন্ধ করল।

ঢাকা ও সিউলের কূটনৈতিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, গতকাল সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে রাষ্ট্রদূত ওয়ার্ল্ড এক্সপোর আয়োজকের প্রার্থিতায় দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে বাংলাদেশের ভোট চান। যেখানে বাংলাদেশের আরও দুই বন্ধুপ্রতিম দেশ সৌদি আরব ও ইতালিও প্রতিযোগী হিসেবে রয়েছে। ঢাকার ভোট সৌদির পক্ষে যাওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মূলত ওয়ার্ল্ড এক্সপোর আয়োজক হওয়ার প্রার্থিতা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ভোট চাইতেই আসেন কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত। সেই সুযোগে উত্তর কোরিয়ার বাংলাদেশে দূতাবাস বন্ধের কারণও জানতে চান তিনি। তাকে জানানো হয়, অর্থনৈতিক ও প্রাসঙ্গিক কিছু কারণে পিয়ংইয়ং ঢাকায় দূতাবাস বন্ধ করেছে। এখন থেকে উত্তর কোরিয়া নয়া দিল্লির মিশন থেকে ঢাকার দেখভাল করবে।

ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, দুই কোরিয়ার একে অপরের খোঁজ-খবর রাখাটা স্বাভাবিক। সেই আগ্রহ থেকে হয়ত রাষ্ট্রদূত পার্ক উত্তর কোরিয়ার ঢাকায় দূতাবাস বন্ধের কারণ জানতে চেয়েছেন।

ঢাকা ও সিউলের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ওয়ার্ল্ড এক্সপোর জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা করা দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব এবং ইতালি— তিনটি দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাইরে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে তিনটি দেশই বাংলাদেশের জন্য আলাদা আলাদা গুরুত্ব বহন করে। এরমধ্যে মুসলিম দেশ এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের বিবেচনায় সৌদিআরব প্রথম অগ্রাধিকারে থাকে। অন্যদিকে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অভিবাসী স্বার্থ দেখতে গেলে ইতালি বাংলাদেশের জন্য কম গুরত্বপূর্ণ নয়। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের অনেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়ার্ল্ড এক্সপোর প্রার্থিতায় বাংলাদেশের ভোটের জন্য বেশ তৎপরতা চালিয়েছেন রাষ্ট্রদূত পার্ক। দিন দশকের মাথায় বেশ কয়েকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন তিনি। ভোটের জন্য শেষ মুহূর্ত অবধি দৌড়ঝাঁপ করেছেন পার্ক।

যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশ সৌদিআরবকেই সমর্থন দেবে।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আজ (মঙ্গলবার) রাতে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর জন্য অনুমোদন সংস্থার (বিআইই) ১৮২টি সদস্য রাষ্ট্র ভোটাভুটির মাধ্যমে ২০৩০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোর আয়োজক দেশ নির্ধারণ করবে। প্রথম দফায় তিন প্রতিযোগীর মধ্যে যারা দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পাবে, সেখানে ২০৩০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোর স্থান নির্ধারিত হবে। যদি কোনো প্রতিযোগী দুই-তৃতীয়াংশ ভোট না পায় সেক্ষেত্রে তৃতীয় হওয়া প্রার্থীকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে। দ্বিতীয় দফার ভোটে যে প্রার্থী বেশি ভোট পাবে শেষ পর্যন্ত আয়োজক দেশ হিসেবে সে নির্বাচিত হবে।

এদিকে, চলতি মাসের ২১ নভেম্বর উত্তর কোরিয়া ঢাকায় তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। এখন থেকে দিল্লিতে থাকা উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস বাংলাদেশে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখভাল করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মাসখানেক আগে কূটনৈতিক পত্র দিয়ে ঢাকায় দূতাবাস বন্ধের বিষয়টি জানিয়েছিল পিয়ংইয়ং। গত ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রদূত পার্ক সুং ইয়ুপ বাংলাদেশ ত্যগ করেন।

ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, দ‌ক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়াও নেপালে দূতাবাস বন্ধ করেছে উত্তর কো‌রিয়া। আর্থিক ও কিছু প্রাসঙ্গিক কারণ দেখিয়ে দূতাবাস বন্ধ করেছে তারা।

চলতি মাসের শুরুতে উত্তর কোরিয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট এনএকে প্রো-র প্রতিষ্ঠাতা চাঁদ ও ক্যারল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে উত্তর কোরিয়ার এক ডজনেরও বেশি মিশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সম্ভবত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বব্যাপী পিয়ংইয়ংয়ের বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা ও উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে এটি হতে পারে।

বিশ্বের ১৫৯টি দেশের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বিদেশে তাদের কূটনৈতিক মিশন আছে ৫৩টি, এর মধ্যে তিনটি কনস্যুলেট মিশন ও তিনটি প্রতিনিধি দপ্তর আছে। ইতোমধ্যে অ্যাঙ্গোলা, উগান্ডা ও বাংলাদেশে দেশটির মিশন বন্ধের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া নেপাল ও স্পেনে পিয়ংইয়ংয়ের মিশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

প্রসঙ্গত, উত্তর কোরিয়া ১৯৭৪ সালে প্রথম ঢাকায় দূতাবাস খোলে। তবে দেশটিতে কোনো মিশন খোলে‌নি বাংলাদেশ। চীনের বেইজিংয়ের বাংলাদেশ মিশন থেকে ‘সমদূরবর্তী মিশন’ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।

এনআই/এসএম