বাংলাদেশে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে সরকারে অঙ্গীকারে আস্থা রয়েছে ভারতের। সেজন্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নয়া দিল্লির মাথাব্যথা বা উদ্বেগ নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দিল্লিতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে দেশে ফিরে রোববার (২৬ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব।

বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুই দেশের নির্বাচন আছে সামনের বছরে। নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয়েছে। আমাদের নির্বাচন নিয়ে ওদের যে অভিমত এটা কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টু প্লাস টু ফরমেটের পর তারা বলেছে, তৃতীয় দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না ভারত। নির্বাচন আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি ঠিক করবেন। ওই আঙ্গিকে তিনি (ভারতের পররাষ্ট্রসচিব) বলেছেন।

নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের মতো ভারতের মাথাব্যথা আছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টু প্লাস টু ফরমেটের পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের বক্তব্য টেনে বলেন, এটা তো তাই বলছে। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের দেশের জনগণই এবং যে সংবিধান আছে সে অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আমাদের যে লক্ষ্য আছে, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার অঙ্গীকার আছে; সে ব্যাপারে তারা আস্থা রাখে।

নির্বাচন সামনে এলে স্থিতিশীলতার কথা আসে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে ভারত কোনো বার্তা দিয়েছে কি না জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তাদের (ভারত) এমন কোনো কনসার্ন নাই। তাদের ফুল কনফিডেন্স আমাদের ইনস্টিটিউশন প্রসেস এবং জনগণের ইচ্ছের প্রতিপালন ঘটবে সামনের নির্বাচনে। সেটাই তাদের চাওয়া।

আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমরা বলেছি, বাংলাদেশের মাটিতে অন্য কোনো তৃতীয় দেশের কোনো উপাদানকে আমরা সহ্য করি না। এটার সুফল আমরা দেখতে পাই, নর্থ স্টেস্টে ইন্ডিয়ান স্টেটগুলোতে। সেখানে শা

ন্তি বিরাজ করছে, উন্নয়ন হচ্ছে। তারা এটার প্রশংসা করে। আমরা বলেছি, এ ব্যাপারে আমরা কমিটেড।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সব প্রকার নাশকতা ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি এবং বিএসফের নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন,

সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি চালান বা কয়েক জায়গায় কিছু আগ্নেয়াস্ত্র, বোম এগুলো ‘ইয়ে’ করেছে। নির্বাচনের সময় বা সামনে রেখে আমাদের বিজিবি এবং বিএসএফ যেন তৎপর থাকে, যাতে করে এ ধরনের কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হতে না পারে, কোনো মেটেরিয়াল বর্ডার এলাকাতে না আসতে পারে। এ ব্যাপারে তিনি (ভারতের পররাষ্ট্রসচিব) একমত।

শুক্রবার নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। ঢাকার পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং দিল্লির পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। প্রায় আট মাসের বিরতিতে দ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক ছিল এটি।

সীমান্ত প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সীমান্তে কেউ মারা যাক তারাও (ভারত) চায় না। সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে আরও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সামনের দিনগুলোতে যেন আমরা মৃত্যুহীন সীমান্ত দেখতে পারি সে ব্যাপারে তারাও আন্তরিক।

পানি ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, তিস্তা নিয়ে আমরা অনেক দিন থেকে বলে আছি। ২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তি শেষ হবে। সে ব্যাপারে টেকনিক্যাল কমিটির আলোচনার শুরু করার ব্যাপার আছে। ছয়টি অভিন্ন নদীর বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা আছে। সেগুলো যেন সামনের দিনে আরও বেগবান করা যায় সেটার বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করেছি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রত্যাবাসন কোন পর্যায়ে আছে তাদের বলেছি। তাদের বলেছি, আঞ্চলিক স্বার্থে তারা যেন সহযোগিতা করেন। ওনারা সম্মতি প্রকাশ করেছেন।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে সেপা চুক্তি শেষ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিমসটেক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের সেক্রেটারি জেনারেল আগামী মাসে আসবেন। কানেক্টিভিটির বিষয়ে রেল, সড়ক বা নৌপথে নয় এখানে আমরা গ্রিড কানেক্টিভিটির কথা বলেছি। নেপাল ও ভুটানকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে করা যায়। একটা ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করতে হবে। এটাতে দুই বছর সময় লাগবে। এনার্জি নিড নিয়ে আমরা আগ্রহ দেখিয়েছি।

কনস্যুলার ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, কনস্যুলার ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। এখনও ভিসা দিতে একটু দেরি হচ্ছে। ওনারা অতিরিক্ত লোক লাগিয়েছে। আরও লাগাবে। নৌ পথে যাতায়াতের জন্য আলাদা ভিসা ব্যবস্থা করা যায় কিনা-এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

দিল্লিতে অবস্থান করে বাংলাদেশের জন্যও দায়িত্বপ্রাপ্ত এমন ৯০টি দেশের মিশনপ্রধানদের ব্রিফ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব জানান, আমাদের যে নির্বাচনের শিডিউল হয়ে গেছে সে ব্যাপারে তারা জানে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্রিফ করেছি তাদের। নির্বাচন কমিশনের যে কর্মকাণ্ড, নির্বাচন কমিশনের যে গাইডলাইন রয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে, সেটা সবাইকে দিয়েছি। তারা অনেক বলেছে, আগামীতে তারা ঢাকায় দূতাবাস খোলার বিষয়ে আগ্রহী। বেশ কয়েকটা দেশ ছিল। এর মধ্যে কলম্বিয়া ছিল।

এনআই/পিএইচ