পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল। একইসঙ্গে প্রতিনিধি দলটি আশা প্রকাশ করেছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরবর্তী সরকার গঠন করবে বাংলাদেশ।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইইউর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা প্যাম্পালোনির নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র, শ্রম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র-সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি ইইউর প্রতিনিধি দল। কিন্তু এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইইউর প্রতিনিধিরা বলেছেন, শতকরা ৫৬ ভাগ যে মজুরি ঘোষণা এসেছে এটার সঙ্গে সবাই একমত নন। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা আশা করছেন, বর্তমানে শ্রম খাতে যে অবস্থা বিরাজ করছে, সেটা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের নির্বাচন বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে শ্রমিকদের আন্দোলনের সম্পর্ক নেই জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, চার-পাঁচ বছর পর শ্রমিকরা এ রকম আন্দোলন করে। এটার সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। আর টাইমিংটা একেবারে কাকতালীয়।

বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলাদা করে আলাপ হয়নি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র-সচিব বলেন, ইইউ আশা করে, একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আগামী সরকার গঠিত হবে। নির্বাচন নিয়ে আলাদা করে আলোচনা করেনি। তবে আমরা বলেছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিবেশ দরকার। আজকে রাতে তফসিল ঘোষণা হবে তারপর সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ইইউর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের শ্রম খাতের অগ্রগতি দেখতে এসেছে। শ্রম খাতের অগ্রগতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত সাম্প্রতিক নানা পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেছি। তাদের বলেছি, বাংলাদেশ শ্রম খাতের উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু প্রয়োজনীয় আইন ও সংশোধনী নয় বরং সেগুলো বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে, তা তাদের বলেছি।

ইইউর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের শ্রম খাতের বেশ কিছু ইস্যুতে প্রশংসা করেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র-সচিব বলেন, ইইউর প্রতিনিধি দল আমাদের বেশ কিছু অগ্রগতির প্রশংসা করেছে। আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিশু শ্রম, কর্ম পরিবেশ উন্নয়ন, শ্রমিক ইউনিয়ন আরও সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এছাড়া আমরা শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার পরিস্থিতির অগ্রগতি তুলে ধরেছি।

তিনি বলেন, সমাবেশ, সমিতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বেআইনি আটকের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মানবাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জিএসপি প্লাস পাওয়ার ক্ষেত্রে ইইউ আমাদের সঙ্গে এখন থেকে মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করতে চায়।

এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও ইইউর বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধার পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা ইইউর সঙ্গে জিসপি প্লাস সুবিধা কীভাবে পেতে পারি সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে এলডিসি পরবর্তীতে ইউরোপের বাজারে আমাদের জিএসপি প্লাস সুবিধা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। জিএসপি প্লাসের যে ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে, তারা আশা করছে এটা সহায়ক হবে। এটা হলে আমাদের পূর্ণ আলোচনার সুযোগ থাকবে।

আগামী বছরের মার্চে ইইউর প্রতিনিধি দল আবার বাংলাদেশের শ্রম সংক্রান্ত ইস্যুতে আলোচনার বার্তা দিয়েছে বলেও জানান মাসুদ বিন মোমেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী বলেন, লেবার ইস্যুতে আমাদের ন্যাশনাল প্ল্যান অ্যাকশনের যে ৯টি টার্গেট আছে সেগুলো নিয়ে তারা কথা বলেছেন। যেগুলোর প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। লেবার ল ডেপ্লয়মেন্ট নিয়ে তারা কথা বলেছে। তারা বলেছে, এ ব্যাপারে আইএলও সন্তুষ্ট কিনা? আমরা বলেছি, আইএলওর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক হয়েছে। তাদের অনেক সাজেশন আমরা নিয়েছি। আবার অনেকগুলো নিতে পারিনি।

শ্রম সচিব বলেন, লেবার ইস্যুতে তারা কিছু সাজেশন দিয়েছে। আমরা বলেছি, পরবর্তীতে লেবার সংশোধনে এগুলো যুক্ত করার সুযোগ থাকবে। ইইউ বলেছে, তাদের সঙ্গে ক্লোজ রিলেশন রাখতে।

জিএসপি প্লাস ইস্যুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ সচিব তপন কান্তি বলেন, আমাদের রপ্তানির ৮৫ ভাগ গার্মন্টেস থেকে আসে। সুতরাং এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরবর্তীতে জিএসপি প্লাস থাকে একই সঙ্গে গার্মেন্টস সেক্টর যদি শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে থাকে এটা তো অর্থহীন। আমরা বলেছি, এটা (তৈরি পোশাক) যুক্ত করতে হবে। গার্মেন্টস খাত সফল, এটাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। এটাকে উৎসাহিত করতে হবে। তারা যেন সেভাবে রিপোর্ট দেয়।

এনআই/এসকেডি