বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা নাশকতা, সংঘর্ষের পর চার দফা অবরোধের মধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে ৯৪ বাসসহ ১৩৭ যানবাহনের অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১৫৪টি অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে ঢাকায় বেশি হলেও অগ্নিকাণ্ড কিংবা অগ্নিসংযোগের ঘটনা শূন্য ছিল সিলেটে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক ১৫৪টি আগুন, ঢাকা সিটিতে বেশি। দেশের ২৫টি জেলায় এ ঘটনা ঘটে। তবে ৩৯ জেলায় কিছুই ঘটেনি। আর জেলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি আগুনের ঘটনা গাজীপুরে।

এই সময়ে দিনের চেয়ে রাতেই বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। গড়ে দিনে ৫টি করে বাস পোড়ানো হয়েছে। এসব আগুনের ঘটনায় সারা দেশে পাঁচজন আহতের তথ্য পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের মধ্যে দুইজন ফায়ার সার্ভিস (২৮ অক্টোবর মারধরের শিকার)। পোড়ানো হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের একটি পানিবাহী গাড়িও।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক সারা দেশে মোট ১৫৪টি আগুনের সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি, ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর-১টি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি, ২ নভেম্বর ৭টি, ৪ নভেম্বর ৬টি, ৫ নভেম্বর ১৩টি, ৬ নভেম্বর ১৩টি, ৭ নভেম্বর ২টি, ৮ নভেম্বর ৯টি, ৯ নভেম্বর ৭টি, ১০ নভেম্বর ২টি, ১১ নভেম্বর ৭টি, ১২ নভেম্বর ৭টি, ১৩ নভেম্বর ৭টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক অগ্নিকাণ্ডে মোট ১৩৭ যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে বাস ৯৪টি, মাইক্রোবাস ৩টি, প্রাইভেটকার ২টি, মোটরসাইকেল ৮টি, ট্রাক ১৩টি, কাভার্ড ভ্যান ৮টি, অ্যাম্বুলেন্স ১টি, পিকআপ ২টি, সিএনজি ২টি, নছিমন ১টি, লেগুনা ১টি, ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি ১টি, পুলিশের গাড়ি ১টি।

এর বাইরে বিএনপি অফিস ৫টি, আওয়ামী লীগ অফিস ১টি, পুলিশ বক্স ১টি, কাউন্সিলর অফিস ১টি, বিদ্যুৎ অফিস ২টি, বাস কাউন্টার ১টি, শোরুম ২টি পুড়ে যায়।

তালহা বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক গড়ে দিনে ৫টি করে বাস পুড়ানো হয়েছে।

অপরদিকে দেখা গেছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক সবচেয়ে বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায়, এছাড়া দেশের ২৫টি জেলায় আগুনের ঘটনা ঘটে। তবে ৩৯ জেলায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক কোন অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ ফায়ার সার্ভিস পায়নি। দেশের সকল বিভাগে উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও সিলেট বিভাগে কোন ঘটনা ঘটেনি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা সিটিতে ৮২টি, ঢাকা বিভাগে ৩৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪টি, রাজশাহী বিভাগে ৯টি, বরিশাল বিভাগে ৬টি, রংপুর বিভাগে ৬টি, খুলনা বিভাগে ২টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

তবে সিলেট বিভাগে উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক অগ্নিকাণ্ডের কোন সংবাদ পায়নি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুরে ১৫টি, চট্টগ্রামে ৮টি, নারায়ণগঞ্জ ৬টি, বগুড়া ৫টি, মানিকগঞ্জ ৪টি, ফরিদপুর ৪টি, লালমনিরহাট ৪টি করে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। 

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক দিনের বেলা থেকে রাতে (সন্ধ্যা ৬টা-সকাল ৬টা) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটেছে। ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দিনে ৬১টি ও রাতে ৯৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

আরও দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক অগ্নি নির্বাপণ কার্যক্রমে সারাদেশে ৫ জন (ফায়ার সার্ভিস ২+৩ সাধারণ) আহত উদ্ধার করা হয়। নিহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। আহত ৫ জনের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একজন অফিসার ও ড্রাইভার আহত রয়েছে। ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাহজাহানপুরে অগ্নিনির্বাপণ করার সময় উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক তারা মারধরের শিকার হন। এসময় ফায়ার সার্ভিস এর একটি পানিবাহী গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়।

জেইউ/এমএ