তারের জঞ্জালে নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য

তারের জঞ্জালের ফলে নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য। তাই নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজের সময় ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে অবকাঠামো উন্নয়নে বড় উদ্যোগ নিয়েছে। এ কাজের সময় ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণের মাধ্যমে তারের জঞ্জাল থেকে শহরের সৌন্দর্যকে রক্ষা করবে সংস্থাটি। এর ফলে নতুন ওয়ার্ডগুলোর বিদ্যুৎ, ক্যাবল টিভি, টেলিফোন, ইন্টারনেট এসব পরিষেবার তার নিয়ে যাওয়া হবে মাটির নিচ দিয়ে। ফলে থাকবে না ঝুলন্ত তারের কোনো জঞ্জাল।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ১৮টি ওয়ার্ডে অবকাঠামো উন্নয়নে চার হাজার ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে রাস্তাঘাট, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়ন, ১৩টি খালের উভয় পাশে হাঁটাচলা এবং বাইসাইকেল লেন তৈরি করা হবে। গত বছরের জুলাইয়ে ওই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এসব কাজ করার সময়ই ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণ করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

ইতোমধ্যে ঝুলন্ত তার সরিয়ে শহরের সৌন্দর্য ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এরই ধারাবাহিকতায় সেবা সংস্থার তার ভূগর্ভে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে সংস্থাটি। গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে উত্তরায় পরিষেবার কাজটি শুরু করে ডিএনসিসি। একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টর এলাকায় কয়েকটি সড়কের ঝুলন্ত তার নেওয়া হচ্ছে সড়কের নিচে করা ইউটিলিটি ডাক্টে। প্রথমেই কয়েক কিলোমিটার সড়কে এই ডাক্ট বসানো হয় পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে। সেখানে ৯ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপটিক্যাল ফাইবারসহ অন্যান্য কেবল। পাশাপাশি ডিএনসিসির নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতেও আগামীতে যত সড়ক নির্মাণ হবে, তার দুপাশে ইউটিলিটি ডাক্ট বসানো হবে।

গত অক্টোবর থেকে গুলশানের ঝুলন্ত তার অপসারণ অভিযানে মাঠে নামে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অভিযানের শুরুতেই মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, তারের জঞ্জালে নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য। তাই আগামী এক বছরের মধ্যে ঢাকার সব ঝুলন্ত তার আমরা নামিয়ে ফেলব। আমরা সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের ড্রেনের নিচ থেকে পাইপ দিয়ে দেব।

ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে মোট ১৮২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে প্রধান সড়কগুলো চার লেন ৩৩ কিলোমিটার করা হবে। দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এখানে বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবলসহ অন্যান্য তার মাটির নিচ দিয়ে নিতে ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণ করা হবে।

নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নকাজ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নকাজ নিয়ে আমরা অনেক পরিকল্পনা নিয়েছি। আপতত এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। কোনো বিষয় নিয়ে সরাসরি কথা বলা আমাদের নিষেধ আছে।

তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন ওয়ার্ডগুলোতে প্রচুর কাজ হবে। ফলে উন্নয়নে বদলে যাবে নতুন ওয়ার্ডগুলোর চেহারা। বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবলসহ অন্যান্য তার মাটির নিচ দিয়ে নিতে ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণ করা হবে প্রায় ৯৭ কিলোমিটার।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৯ মে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ৮টি করে ইউনিয়ন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরের বছরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, বেরাঈদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়।

এএসএস/এইচকে