ইন্টারনেটের ৩ দিনসহ স্বল্প মেয়াদের সব প্যাকেজ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে  (ক্র‍্যাব) ইন্টারনেট মূল্য বৃদ্ধি ও প্যাকেজ জটিলতা নিরসনে করণীয় শীর্ষক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনেটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন।

স্বল্প মেয়াদী প্যাকেজ বাতিলের সিদ্ধান্তের পর ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বর্তমানে তৈরি হয়েছে এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন অনেক আগেই সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে সতর্ক করেছিল। তখন বক্তব্য আমলে নেওয়া হলে ইন্টারনেটের মূল্য নিয়ে আজকের এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন শুরু থেকেই ৩ দিনের মতো স্বল্পমেয়াদী ইন্টারনেট প্যাকেজ বাতিলের বিরোধী ছিল। কারণ, নতুন নির্দেশনা কার্যকর করার আগে প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক ৩ দিন বা তার কম মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করতেন। সেই গ্রাহকেরা এখন বাধ্য হয়ে ৭ দিন মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করছেন। তিনদিনের মতো স্বল্প মেয়াদের প্যাকেজ বাতিল হলে যে ইন্টানেটের মূল্য বেড়ে যাবে সে বিষয়টি মোবাইল অপারেটররাও বিভিন্ন সময়ে বিটিআরসিকে এবং গণমাধ্যমে জানিয়ে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রাহকদের জন্য প্যাকেজ সংখ্যা ৪০-এ নামিয়ে আনার কারণেও সার্বিকভাবে ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আমরা মনে করি। এর ফলে একদিকে গ্রাহকের প্যাকেজ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে, অপরদিকে এর মাধ্যমে অপারেটরদের মূল্য বৃদ্ধি করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। 

স্বল্প আয় ও প্রান্তিক গ্রাহকদের ব্যবহৃত স্বল্প মেয়াদী ও স্বল্প মূল্যের ইন্টারনেট প্যাকেজ বাতিলের কারণে গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, কঠিন এ সময়ে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।
আমরা জানি, বাজারে কোনো ইন্টারনেট প্যাকেজ বিটিআরসির ট্যারিফ অনুমোদন ব্যতীত অপারেটররা ছাড়তে পারে না।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিন দিনের মতো স্বল্প মেয়াদী প্যাকেজগুলো বাতিলের পর এখন যে সব প্যাকেজ বাজারে চালু আছে সেগুলোও একইভাবে বিটিআরসির অনুমোদন পেয়েছে। মূল্য কমানোর যে আলোচনা এখন চলছে, তাহলে কী আমরা ধরে নেবো বিটিআরসি'র অনুমোদন ছাড়াই অপারেটররা প্যাকেজ বিক্রি করছে? 

নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনে যে প্যাকেজ বাজারে ছাড়া হয়েছে সেটির মূল্য কমাতে নতুন নির্দেশনা প্রমাণ করে মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসি'র মধ্যে ন্যূনতম সমন্বয় নেই। মূল্য বৃদ্ধির এই দায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। স্বল্প মেয়াদের প্যাকেজ বাতিলের সিদ্ধান্তের পর এক মাস না পেরোতেই মূল্য পরিবর্তনের আরেকটি পদক্ষেপ বাজারে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে স্বল্প সময়ে একাধিক হস্তক্ষেপ গ্রাহকদের একদিকে বিভ্রান্ত করবে, অপরদিকে তা বাজারের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশকেও বিঘ্নিত করবে।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র নির্বাচন উপলক্ষে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, এরপর যদি আবার মূল্য বৃদ্ধি পায় তাহলে তার দায় কে নেবে? মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে গত এক মাসে গ্রাহকদের যে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে সেটি কী গ্রাহকদের আদৌ ফেরত দেওয়া হবে?

সংবাদ সম্মেলনে ইন্টারনেটের মূল্য ও প্যাকেজ নিয়ে ৬টি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো, ৩ দিনসহ স্বল্প মেয়াদের সব প্যাকেজ পুনর্বহাল করতে হবে, ইন্টারনেটের মূল্য আগের চেয়েও কমাতে হবে, ইন্টারনেটের মূল্যের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা কমিয়ে সহনীয় করতে হবে, গ্রাহকের পছন্দের প্যাকেজের ওপর সীমা তুলে দেওয়া, মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে গত এক মাসে গ্রাহকদের যে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে তা সমন্বয় করা ও প্যাকেজের সংখ্যা নিয়ে গ্রাহক বিভ্রান্তি বন্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ফেলো প্রফেসর ড. এ.কে.এম রিয়াজুল হাসান, ভোক্তা সংগঠক ও বাজার বিশ্লেষক কাজী আব্দুল হান্নান ও কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট সাহেদা বেগম।

এমএসি/এমএসএ