নিম্নতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য প্রস্তাবিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।

আজ এক যৌথ বিবৃতিতে ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান বলেন, নিম্নতম মজুরি বোর্ড বাস্তবতা বিবর্জিত প্রস্তাবনা দিয়েছে। অবিলম্বে এই প্রস্তাবনা প্রত্যাহার করতে হবে। মেহনতি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।

নেতারা বলেন, নিম্নতম মজুরি বোর্ড মালিকপক্ষের প্রস্তাবিত অযৌক্তিক প্রস্তাবনা মেনে নিয়েছে। তারা শ্রমিকদের দুর্দশা আমলে না নিয়ে কেবল মালিকদের স্বার্থরক্ষায় মনোযোগী হয়েছে। তারা দফায় দফায় বৈঠকের নামে সময়ক্ষেপণ করেছে। তাদের এই অযৌক্তিক প্রস্তাবনা তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। দুঃখজনক হলেও সত্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় হলেও মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে শীর্ষ দশের মধ্যে নেই। বাংলাদেশের শ্রমিকরা ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তানের তুলনায় কমপক্ষে ১০০ ডলার কম বেতন পেয়ে আসছেন। অথচ পোশাক ক্রেতারা প্রায় সমমূল্যে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় করে। বিদেশি ক্রেতারা দেশের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও দুর্দশা পর্যবেক্ষণ করে হতবাক হয়ে গেছে। তারা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য মালিকদের বারবার তাগাদা দিলেও মালিকরা নানা অজুহাত দেখিয়ে চুপ হয়ে যায়। মালিকদের দেওয়া অজুহাত ধোপে টেকে না। কারণ মালিকরা সরকার থেকে নানাবিধ সুবিধা পেয়ে আসছে। যা দেশের অন্যান্য শিল্প পায় না। অথচ সে শিল্পখাতে কর্মরত শ্রমিকরা পোশাক শ্রমিকদের থেকে বেশি বেতন-ভাতা পেয়ে আসছে। 

২০১৮ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি করা হয়েছিল ৮ হাজার টাকা। যা সে সময়ের জন্য যৌক্তিক ছিল না। তা সত্ত্বেও শ্রমিকরা দেশের স্বার্থে কাজ চালিয়ে গিয়েছে। আজকে শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দেশের ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতিতে নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। আজকে শ্রমিকদের ঘরে ৩ বেলার খাবার নেই। থাকার জন্য এখনো শহরের ঝুপড়ি ঘরকে বেছে নিতে হচ্ছে। চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়েছে। সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। এমন দুর্দিনে ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা শ্রমিকদের পিঠে ছুরিকাঘাতের সমান।

আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, সকল তামাসা বন্ধ করে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। অন্যান্য দেশের ন্যায় শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। শ্রমিকদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় শ্রমিকরা নিজেদের দাবি পূরণে আগামী দিনে কঠোর আন্দোলনে ধাবিত হলে সরকার ও মালিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

এসআই/এনএফ